এবছর জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো শহরে আইআরআই পদক দেয়া হয় “কিলিং পাভেল” নামের একটি তথ্যচিত্রকে – যা নির্মিত হয়েছে ইউক্রেনের সাংবাদিক পাভেল শেরেমেত হত্যাকান্ডের তদন্তকে ঘিরে। এটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্স (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন) এর দেয়া সর্বোচ্চ সম্মান।
এই প্রথমবারের মত ইউক্রেনীয় সাংবাদিকরা মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কার পেলেন, যা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পেয়ে থাকে নিউ ইয়র্ক টাইমস কিংবা ওয়াশিংটন পোস্টের মতো আউটলেটগুলি (“এবছরও নিউইয়র্ক টাইমস পদক পেয়েছে হার্ভি ওয়েইনস্টাইনের যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ”হ্যারাস্ড”এর জন্য)। কিলিং পাভেল একই মাসে ইতালির রিকসিওনে তাদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার ডিআইজি ফেস্টিভাল অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে।
কিলিং পাভেল তৈরি হয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অলাভজনক সংগঠন Slistvo.info এবং ওসিসিআরপি’র নেতৃত্বে। অনুসন্ধান করেন আন্না বেবিনেটস, এলেনা লোগিনোভা, ভিলাদ লাভরভ, দিমিত্রো জিন্যাপ, ম্যাট সারনেকি, ইলিয়া ম্যাগাজানিন, সার্জিউ ব্রেগা এবং টিমি অ্যালেন(বেলিংক্যাট)এর মত সাংবাদিকরা। এই অনুসন্ধানের মূলে ছিল পঞ্চাশটিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে পাওয়া ফুটেজ- যা অনুসন্ধানী দলটিকে হত্যাকান্ডের সময় এবং পরবর্তী দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনা জোড়া দিতে সাহায্য করেছিল।
ইউক্রেনের শীর্ষ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ননপ্রফিট ইনভেস্টিগেটিভ সেন্টার Slidstvo.info –এর প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রো জিন্যাপ জিআইজেএন ইউটিউব ভিডিও সিরিজের একটি ভিডিওতে (রুশ ভাষায়) অপরাধের দৃশ্য আছে এমন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের পাঁচটি কৌশল বাতলে দিয়েছেন; যা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরীর জন্য খুবই কার্যকর। তার সেই পরামর্শের সারমর্ম এখানে তুলে ধরা হলো।
১। একে অপরকে সহযোগিতা করুন
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের জন্য দলবদ্ধ হয়ে কাজ করা নিরাপদ। ঘটনাস্থল থেকে একজন সাংবাদিককে জোর করে তাড়িয়ে দেয়া সম্ভব কিন্তু কয়েকজন একত্রে থাকলে সেটি সম্ভব নয়। দলবদ্ধ থাকলে সাংবাদিকরা আরো বেশি এবং দ্রুত কাজ করতে পারবেন।
২। কাজের এলাকা ভাগ করে নিন
যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানকার একটি মানচিত্র নিন এবং এটিকে এক থেকে তিন বর্গ কিলোমিটারের কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করুন। একেকজন সাংবাদিককে একেকটি সেক্টরের দায়িত্ব দিন। এলাকায় যত সিসিটিভি ক্যামেরা আছে তা খোঁজা শুরু করুন এবং যতদ্রুত সম্ভব ফুটেজ সংগ্রহ করুন। মনে রাখতে হবে, দৃশ্যগুলি সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের জন্য সংরক্ষিত হয়,এর পরে এটি মুছে ফেলা হয়। সুতরাং আপনাকে তাড়াতাড়ি করতে হবে।
৩। কখনো সন্দেহভাজনের রুট অনুমানের চেষ্টা করবেন না
আগে থেকেই কোন বদ্ধমূল ধারনা নিয়ে গেলে এবং সেই অনুযায়ী চললে ভুল করবেন। এতে অনেক মূল্যবান ফুটেজ আপনার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ধৈর্যশীল হোন, নিয়ম মেনে চলুন এবং আপনার সেক্টর কাভার করুন। আপনার সেক্টরের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলির একটি তালিকা তৈরি করুন এবং আপনার অগ্রগতি চিহ্নিত করুন। সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য নজর রাখুন,ক্যামেরার মালিকদের সাথে কথা বলুন এবং নিজের কাজের ব্যাপারে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে রাখুন। তাদের বলুন আপনি একটি অপরাধ নিয়ে অনুসন্ধান করছেন এবং আপনার ফুটেজ প্রয়োজন।
৪। তৎক্ষনাৎ ফুটেজ দেখবেন না
সময়ই মূলকথা। কয়েক ঘন্টার ফুটেজ বিশ্লেষণে কয়েক ঘন্টা সময় লাগতে পারে। আপনি কেবল তখনই ফুটেজ দেখা শুরু করুন, যখন মনে হবে আপনি যা পারেন তার সবই সংগ্রহ করেছেন এবং এরচেয়ে বেশি আর সম্ভব নয়। সাধারণত মাসব্যাপী কঠোর পরিশ্রমের পর সেই সময় আসে ।
৫। হার্ড ড্রাইভ ও আপনার সম্পাদকের চিঠি প্রস্তুত রাখুন
আপনি এমন কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা মালিক পাবেন, যারা আপনাকে ফুটেজ দিতে চায়। এত ছবি ডাউনলোড করতে অনেক ’মেমোরি’ দরকার। আপনার সাথে একাধিক হার্ড ড্রাইভ ও মেমোরি স্টিক বহন করুন। আপনি যে আসলেই এই অনুসন্ধানের দায়িত্বে আছেন তা নিশ্চিত হতে অন্যরা প্রমাণ চাইতে পারে। তাই আপনার সম্পাদকের স্বাক্ষরসহ একটি চিঠির ডজন খানেক কপি সঙ্গে রাখুন। ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা লেখার জন্য জায়গা খালি রাখুন, যাতে আপনি তাৎক্ষনিক তা পূরণ করতে পারেন। এটি আপনাকে অনেক দ্রুত কাজ করতে সহায়তা করবে।
আর অবশ্যই দেখুন তথ্যচিত্র “কিলিং পাভেল”
ওলগা সিমানোভিচ জিআইজেএন-এর রাশিয়ান ভাষার সম্পাদক। তিনি এসটিবি’র ভিকনা-নভিনিতে চিত্রনাট্যকার, প্রশিক্ষক, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং টিভি সংবাদ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন এবং স্কুপ ম্যাগাজিনের একাধিক আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানে অংশ নিয়েছেন। তিনি ইউক্রেনীয়, রাশিয়ান, ইংরেজি এবং গ্রিক ভাষায় পারদর্শী।