গত গ্রীষ্মে মেক্সিকোর জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে যায় ভুল ও ভুয়া তথ্যে। নিউইয়র্ক টাইমস জরিপের কল্পিত ছবিতে সয়লাব হয়ে পড়ে ফেসবুক। ‘বট’ তথা কম্পিউটার প্রোগ্রামের তৈরি হ্যাশট্যাগ আর সেলিব্রেটিদের উদ্ধৃত করে ভুয়া বক্তব্য আসতে থাকে, টুইটারেও।
এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বছরের শুরুর দিকে একজোট হয় দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম, সংবাদ সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো। তারা তথ্য-যাচাই ও ভুয়া খবরকে মিথ্যা প্রমাণের একটি সমবেত উদ্যোগ নেয়, যার নাম দেয়া হয় ‘ভেরিফিকাদো ২০১৮’।
নিচে এই লেখার একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো।
- চ্যালেঞ্জ: মেক্সিকোতে রাজনৈতিক বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। জুলাইয়ের এক তারিখে দেশটির নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঠিক আগের সেই সময়টাতে সংবাদ মাধ্যমগুলোও চাচ্ছিলো মিথ্যা তথ্য মোকাবেলায় এক হয়ে কাজ করতে।
- কৌশল: অ্যানিমেল পলিটিকো, এজে+এসপ্যানিওল এবং পপ-আপ নিউজ রুমের নেতৃত্বে মেক্সিকোর গণমাধ্যমগুলো এক হয়ে গড়ে তোলে ‘ভেরিফিকাদো ২০১৮’, এটি তথ্য যাচাইয়ের একটি পারষ্পরিক সহযোগিতাভিত্তিক (কোলাবরেটিভ) উদ্যোগ।
- সংখ্যা: ৯০টিরও বেশি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় ভেরিফিকাদোয়।
- শিক্ষণীয়: এমনভাবে ভেরিফিকাদোর কাঠামো তৈরী করা হয়, যাতে সদস্যরা বিভিন্ন স্তরে অংশ নিতে পারেন। সুযোগ রাখা হয়, যাতে জনসাধারনও মিথ্যা তথ্য উদঘাটনে সহায়তা করতে পারে।
- ভবিষ্যৎ: এই পার্টনারশিপ নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হলেও, তারা অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগও উন্মুক্ত রাখেন।
- আরো জানতে চান?: ভেরিফিকাদো এবং তারা যেসব টুল ব্যবহার করে, সে সম্পর্কে আরও জানতে পারেন। চাইলে, মেক্সিকোর নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু লিঙ্কও পাঠাতে পারি আপনাকে।
চলুন এবার কিছুটা গভীরে প্রবেশ করা যাক:
চ্যালেঞ্জ
মেক্সিকো জুড়ে ভোটাররা পহেলা জুলাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বলা হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেডারেল ও স্থানীয় পর্যায়ের দশ সহস্রাধিক প্রার্থীর অংশগ্রহনে। নাগরিকরা একজন প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসের উভয় কক্ষে ছয়শ’২৮ জন আইনপ্রণেতাকে নির্বাচিত করবেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ৩২টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩০টির স্থানীয় নির্বাচনও।
মেক্সিকোর জন্য এই নির্বাচনের প্রভাব অনেক ব্যাপক। আবার দেশটিতে ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আবির্ভাবের কারণে। (মেক্সিকোর নির্বাচনী ইতিহাসের অতিরিক্ত পটভূমির জন্য স্ক্রল করুন “আরো জানতে চান?” অংশে।)
আর সে কারণে ২০১৭ সালের শেষ ভাগ ও ২০১৮ সালের শুরুর দিকে গণমাধ্যমগুলো নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের প্রস্তুতি নেয় এবং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চিন্তা-ভাবনা শুরু করে, তারা কীভাবে ভুল ও বিকৃত তথ্যের আসন্ন ঢেউকে মোকাবেলা করবে ।
এজে+এসপ্যানোল (স্প্যানিশ-ভাষায় আল জাজিরার মোবাইল ফার্স্ট সংস্করণ) পপ-আপ নিউজরুম এজন্য আলোচনা শুরু করে। পপআপ নিউজরুম হলো, মিডান, ডিগ ডিপার এবং অ্যানিমেল পলিটিকোর নেতৃত্বে গড়ে তোলা কোলাবরেটিভ জার্নালিজম উদ্যোগ এবং একটি স্বাধীন ডিজিটাল-ফার্স্ট সংবাদ মাধ্যম।
২০১৫ সালে অ্যানিমেল পলিটিকো চালু করে মেক্সিকোর প্রথম তথ্য যাচাই সাইট এল সাবুয়েসো (শিকারী কুকুর)। ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে তারাও নিজেদের প্রভাব এবং আওতা বাড়াতে চাইছিলো। (অ্যানিমেল পলিটিকো হচ্ছে মেক্সিকোতে ফেসবুকের অফিসিয়াল তৃতীয় পক্ষীয় তথ্য যাচাই প্রতিষ্ঠান।)
মিডান এর আগে ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেকশনল্যান্ড এবং ২০১৭ সালে ফ্রান্সের নির্বাচনে ক্রসচেকের মত সহযোগিতামূলক প্রকল্পে কাজ করেছে। পরে এটি পপ-আপ নিউজরুম তৈরিতে অংশীদার হয়ে যায়। তারা যুক্তরাজ্যের ২০১৭ সালের নির্বাচনে ফ্যাক্টচেক প্রকল্পগুলোর সাথে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি মেক্সিকোতেও একই রকম কিছু করার চেষ্টায় ছিল।
আর একই সময়ে এতসব ঘটনা, সহযোগিতার সম্ভাবনাকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
মিডানের ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিচালক টম ট্রেউইনার্ড বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক ব্যবহারের (ম্যানিপুলেশন) জন্য মেক্সিকোতে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছিল। এটা ছিল ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, যার উত্থান আমরা লক্ষ্য করেছি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। আমরা একসাথে ভাবতে শুরু করি, সহযোগিতা কেমন হতে পারে এবং আমরা কীভাবে জড়িত হতে চাই।”
কৌশল
তিন প্রাথমিক পার্টনার একত্র হয়ে গঠন করে ভেরিফিকাদো ২০১৮। স্প্যানিশে এই শব্দের বাংলা অর্থ “যাচাইকৃত”। তারা মেক্সিকোর নানা আকার ও ধরণের সংবাদ মাধ্যম নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
ভেরিফিকাদো তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর নজর দেয়। সেগুলো হলো: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ানো মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর দাবি উদঘাটন, বিতর্কের সময় সরাসরি তথ্য-যাচাই এবং সবশেষে নির্বাচনের দিন নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ।
তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয় মেক্সিকো সিটির কেন্দ্রীয় বার্তাকক্ষ থেকে। কিন্তু সারা দেশ থেকেই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করে।
প্রত্যেক প্রধান সদস্যের একটি প্রাথমিক দায়িত্ব আছে। এল সাবুয়েসো টিমকে সাথে নিয়ে অ্যানিমেল পলিটিকো তথ্য যাচাই ও সত্য উন্মোচনে নেতৃত্ব দেয়। এজে+এসপ্যানোল তার মাল্টিমিডিয়া দক্ষতা ব্যবহারের মাধ্যমে ভিডিও তৈরী করে এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়।
আর মিডান তৈরি করে তথ্য যাচাই করার প্লাটফর্ম। মিডান’স চেক নামের উন্মুক্ত সেই প্লাটফর্ম ডিজাইন করা হয় ভেরিফিকেশন ওয়ার্কফ্লো সহজে পরিচালনার জন্য। দলটি যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে স্ল্যাক এবং প্রতিদিন ইমেইলে সদস্যদের কাছে কাভারেজ পরিকল্পনা পাঠায়।
যে তথ্যটি যাচাই করা দরকার, তা কেন্দ্রীয় বার্তাকক্ষে পাঠায় সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারপর সবাই মিলে প্রকৃত তথ্য একের পর এক সাজিয়ে, সত্যতা যাচাই বা তাকে মিথ্যা প্রমাণ করে।
ভেরিফিকাদোর সুনির্দিষ্ট একটি হ্যাশট্যাগ আছে, #QuieroQueVerifiquen (#IwantYouToVerify), যেখানে সাধারণ মানুষও দলটির কাছে নিয়মিত তথ্য-যাচাইয়ের আবেদন করতে পারেন।
ভেরিফিকাদো সারা দিনে যত কিছু কাভার করে, তার সবটুকুই ব্যবহার করতে পারে, প্রতিটি সদস্য প্রতিষ্ঠান। আউটলেটগুলো সম্মিলিতভাবে তাদের কাভারেজ ভাগ করে নেয় এবং কেন্দ্রীয় বার্তাকক্ষ তা পাঠায় বাকিদের কাছে, যেন তারা চাইলে সেটি প্রকাশ করতে পারে।
অ্যানিমেল পলিটিকোর নির্বাহী সম্পাদক তানিয়া মন্টালভো বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের যাচাই করা তথ্য সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক। আমাদের লক্ষ্য হলো, সঠিক এবং যাচাই করা তথ্যের পাঠক বাড়ানো। ৯০ সদস্যের এই জোটে, সবাই একই কাজ করছে। আমরা যা প্রকাশ করছি, তারা সেটি ছড়িয়ে দিচ্ছে সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে।’
সংখ্যা
মেক্সিকোর ৩২টি রাজ্যের মধ্যে ২৮টি থেকে প্রায় ৯০টি গণমাধ্যম ভেরিফিকাদোর সদস্য হয়েছে। গত মার্চে এটি যাত্রা শুরু করে ৬০টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে, যা পরে আরো বেড়ে বর্তমান আকার নেয়।
ভেরিফিকাদো শুরুর আগে, মেক্সিকোর নানা প্রান্ত থেকে ১০০ জনেরও বেশী সাংবাদিককে এক জায়গায় জড়ো করে পপ-আপ নিউজরুম। সেখানে সবাই কীভাবে একটি ওয়ার্কফ্লোতে কাজ করবেন, সংবাদ সংগ্রহ বা যাচাই কীভাবে হবে, তার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ভেরিফিকাদো টিম মিটিং। ছবি: ফেসবুক।
ভেরিফিকাদোর ১৭২,০০০ টুইটার অনুসারী এবং ফেসবুকে প্রায় ১৫৬,০০০ লাইক আছে (এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত)।
মিডানের ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিচালক টম ট্রেউইনার্ড বলেন, “[ভেরিফিকাদো] এখন বেশ হাই-প্রোফাইল হয়ে গেছে… এমনকি নির্বাচনের প্রার্থীরাও এই প্রকল্প সম্পর্কে জানেন। অন্য কোনও প্রকল্পের বেলায় এমনটা ঘটেনি।”
ভেরিফিকাদোকে সহায়তা দিয়েছে গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ এবং ফেসবুক জার্নালিজম প্রজেক্ট। অবশ্য এই দুই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রকল্পটি কত টাকা নিয়েছে তা প্রকাশ করেননি ট্রেউইনার্ড।
শিক্ষনীয়
আপনার ভূমিকা জানুন: ভেরিফিকাদোর প্রাথমিক সাফল্যের একটি মূল উপাদান হলো, এর প্রতিটি সদস্য তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানেন। কিছু প্রকাশনা ও প্রতিষ্ঠান তুলনামূলকভাবে বেশি কাজ করেছে। কিন্তু প্রতিটি আউটলেটই সামগ্রিক মিশনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা প্রত্যেকে নিজের সামর্থ অনুযায়ী অবদান রাখতে আগ্রহী।
উদাহরণস্বরূপ, মেক্সিকোর বৃহত্তম সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান টেলিভিসা কোনও সম্পাদকীয় ভূমিকা পালন করছে না, তবে এটি তার ব্যাপক দর্শক শ্রেণীর কাছে ভেরিফিকাদোর কাভারেজ পৌঁছে দিচ্ছে। ছোট্ট স্থানীয় বার্তাকক্ষ মনিটর এক্সপ্রেসো যাচাইয়ের জন্য নিয়মিত তথ্য পাঠাচ্ছে এবং প্রকল্পের জন্য প্রতিবেদন তৈরীতে ভূমিকা রাখছে।
মন্টালোভা বলেন, “মেক্সিকো শহর থেকে অনেক দূরে, ছোট একটি রাজ্যে, খুব ছোট একটি বার্তাকক্ষ রয়েছে। এখন তারা যা করছে তা জাতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে।”
উদ্যোগটি শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদেরও সঙ্গে নিয়েছে। প্রথাগত সাংবাদিকদের বাইরে থেকেও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করায়, ভেরিফিকাদো সহজেই বিষয় সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি ও দক্ষতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে – বিশেষ করে নির্বাচনী বিতর্কের মতো সংবাদ ব্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে।
“আমরা সাংবাদিক, কিন্তু আমরা আমাদের কাজের পরিধি জানি। উদাহরণস্বরূপ, আইন প্রণয়ন বা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ সম্পর্কে কোনও তথ্য যাচাইয়ের সময়, আমরা প্রচুর ডেটা সংগ্রহ করতে পারি। কিন্তু পাঠককে তখনই ভালো কিছু দেয়া সম্ভব হয়, যখন আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে বিষয় ধরে ধরে কাজ করতে পারি,” বলছিলেন আল জাজিরা মিডিয়া ইন্সটিটিউটের কনটেন্ট এডিটর ডায়ানা লারিয়া ম্যাক্সিস, যিনি প্রকল্পটিতে কাজ করেছেন।
ভেরিফিকাদো মিথ্যা উদ্ঘাটনকে তার লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে এবং সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেয়াকে সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান দিয়েছে। যেহেতু সব সদস্য একই লক্ষ্যকে ধারন করেছে, সে কারণে তারা স্বেচ্ছায় যার যার নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করছে এবং মেক্সিকোর ভোটারদের প্রকৃত ও যাচাইযোগ্য তথ্য সরবরাহের কাজে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে।
আপনার শ্রোতা সম্পর্কে জানুন: মিডান ও পপ-আপ নিউজরুম আগেও একই ধরনের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু ইলেকশনল্যান্ড ও ক্রসচেকের অভিজ্ঞতা থেকে ভেরিফিকাদো সেটুকুই নিয়েছে, যা কাজে আসবে। এবং তারা নিশ্চিত করেছে, সেগুলো যেন মেক্সিকোর পরিবেশের সাথে খাপ খায়।
এজে+এসপ্যানোলের নেতৃত্বে ভেরিফিকাদো একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। যা পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয় তাদের প্রতিবেদন আর নাগরিকদের সুযোগ দেয় প্রশ্ন করার। যদি কেউ যাচাই করার জন্য কোনও তথ্য পাঠান, তখন ভেরিফিকাদোর একজন সাংবাদিক সরাসরি সঠিক তথ্যসহ তার জবাব দেন।
” হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের কমিউনিটি তথ্যের একেকজন মূখপাত্রে রূপান্তরিত হতে পারেন,” লারিয়া বলেন।”এবং হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা, ভেরিফিকাদো যা খুঁজে পেয়েছে, তাও ছড়িয়ে দিতে পারেন।”
ভেরিফিকাদো তার হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে আরো বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করতে পারে। এটা অনেকটা ইনস্টাগ্রাম স্টোরির মত এবং ব্যবহারকারীরা প্রতিবেদন সম্পর্কে ভেরিফিকাদোতে সরাসরি প্রশ্নসহ বার্তা পাঠাতে পারেন।
ভেরিফিকাদো শুরু থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তারা অপেক্ষা করেছে এবং এটি চালু করেছে মানুষ তাদের সম্পর্কে আগ্রহী হওয়ার পরই। কারণ তারা চাননি এটি মানুষের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে স্প্যামে (অপ্রয়োজনীয় বার্তা) পরিণত হোক।
“এটা তাদের ফেসবুক বা টুইটার নয়,” লারিয়া বলেন। “এটি তাদের ব্যক্তিগত মেসেজিং অ্যাপ, যেখানে তারা তাদের মা, বাবা, স্বামী কিংবা স্ত্রীর সাথে কথা বলেন। এটি আরো বেশি ব্যক্তিগত জায়গা। আমরা প্রথমে ভেরিফিকাদো সম্পর্কে তাদের আস্থা অর্জন করতে চেয়েছি এবং তারপর আমরা হোয়াটসঅ্যাপ চালু করেছি।”
আপনার স্টাফ সম্পর্কে জানুন: ভেরিফিকাদোর মূলনীতি হচ্ছে শিক্ষা। মার্চ মাসে পপ-আপ নিউজরুম একটি কর্মশালা আয়োজন করে। সেখানে ডিজিটাল যাচাই সম্পর্কে সারা দেশের সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এটি তাদের মধ্যে গতি সঞ্চারে সাহায্য করে, যাতে তারা কার্যকর অংশীদার হতে পারেন।
কীভাবে অনলাইন কনটেন্ট যাচাই করতে হয়, বটের ব্যাখ্যা এবং মেক্সিকোর নির্বাচন প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে, তা জনসাধারণকে বোঝাতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভেরিফিকাদো। ‘রিভার্স ইমেজ সার্চ’ কিভাবে করতে হয়- এ সম্পর্কে এজে+এসপ্যানোলের তৈরী করা ভিডিওটি ফেসবুকে দশ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এটি তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাভারেজের একটি।
” রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়ানো এক প্রার্থীর ছবি টুইট করে, তার প্রচারদলের এক কর্মী বলেছিলেন, এটি এইমাত্র তোলা। কিন্তু ছবিটি যে আসলে ২০১২ সালের, তা খুব দ্রুতই বের করে ফেলে মানুষ।” বলেছেন লারিয়া।
এই ধরণের শিক্ষামূলক প্রতিবেদন তৈরি করে ভেরিফিকাদো তার শ্রোতা-দর্শনার্থীদের ক্ষমতায়ন করছে এবং প্রতিবেদনে সহায়তা করার জন্য তাদের সক্ষম করে তুলছে।
“শেষ পর্যন্ত ভেরিফিকাদো থেকে আমরা এটাই চেয়েছিলাম”, তিনি বলেন। “আমরা গণমাধ্যম ও দর্শক, শ্রোতা ও পাঠকদের কাছে তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব ষ্পষ্ট করতে চাই।”
ভবিষ্যৎ
মেক্সিকোর নির্বাচন ১ জুলাই। ভেরিফিকাদো অংশীদারিত্ব নির্বাচনের সময় পূর্ণগতিতে চলবে। সম্ভবত ভোট গ্রহণের পর ভোট গণনা ও ফলাফল নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতি পর্যায়ে আরেকটি নির্বাচনী বিতর্কের জন্য ১২ জুন দিন ধার্য ছিলো এবং ভেরিফিকাদো ওই বিতর্কের লাইভ ফ্যাক্ট-চেক করেছিলো।
নির্বাচনের আগে, পপ-আপ নিউজরুম সাংবাদিকদের জন্য অতিরিক্ত কর্মশালার পরিকল্পনা করে, যাতে তারা আরো বেশি শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
এবং নির্বাচনের দিন, ভেরিফিকাদো মেক্সিকো জুড়ে নির্বাচনী ইস্যু চিহ্নিত করতে সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক জোরদার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
মন্টালভো বলেন, “আমাদের জোটে ৯০টি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের অধিকাংশের রিপোর্টাররা নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে মাঠে রয়েছেন এবং আমরা তাদের সাথে কাজ করতে পারি”। “যদি গুজব ওঠে, আপনার রাজ্যের রাজধানীতে ভোট দেওয়া অসম্ভব, কারণ সেখানে আগুন লেগেছে, তাহলে সদস্যদের সহায়তায় আমরা বলতে পারি, এটি সত্য নয়। এখানে ভিডিও আছে। ছবি আছে। (আমরা) এধরনের গুজব উদ্ঘাটন করতে পারি। ”
আরো জানতে চান?
- জানতে চান, মেক্সিকোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কিভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে? এই বছরের শুরু থেকে পডকাস্টে এই প্রশ্নের যত উত্তর দেয়া হয়েছে, তা শুনুন। এটি আপনাকে ভেরিফিকাদো যে ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে সে সম্পর্কে একটি ধারনা দেবে।
- বিবিসির এই প্রতিবেদন সাম্প্রতিক মেক্সিকো নির্বাচনে ভুয়া তথ্য এবং বট ও ট্রলের ব্যবহার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পাঠ।
- যাচাইয়ের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে, এই ধরনের কাজের জন্য মিডানের তৈরি টুল নিয়ে, গতবছর নিমান ল্যাবে প্রকাশিত স্টোরিটি পড়ুন।
- এবং ভেরিফিকাদো-২০১৮ সম্পর্কে আরো জানতে হলে দেখুন লস্ এঞ্জেলেস টাইমস এর এই অসাধারণ প্রোফাইল।
এই লেখাটি প্রথমে প্রকাশিত হয় লেনফেস্ট ইন্সটিটিউট ওয়েবসাইটে এবং অনুমতি নিয়ে এটি অনুলিপি করা হয়েছে।
জোসেফ লিখটারম্যান হচ্ছেন দ্য লেনফেস্ট ইন্সটিটিউট ফর জার্নালিজম (স্থানীয় সংবাদের জন্য টেকসই সমাধান খুঁজতে আগ্রহী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান)। ইতোপূর্বে তিনি নিম্যান জার্নালিজম ল্যাবের জন্য সাংবাদিকতা উদ্ভাবন বিষয়ে এবং রয়টার্স ইন ডেট্রয়েটের জন্য রিপোর্ট করেছেন।