গণমাধ্যম পরিস্থিতি
বাহরাইনের সংবিধান মত প্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয় – শুধু ইসলাম ধর্মের মূল বিশ্বাস ও “জনতার ঐক্য” এর সাথে সাংঘর্ষিক এবং “সাম্প্রদায়িক বিবাদ” উস্কে দেয় – এমন বিষয় বাদে। অবশ্য ২০০২ সালের প্রেস, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং আইন বাকস্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। আইনে ১৭ ধরণের অপরাধের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে ৩টিতে রয়েছে কারাদণ্ডের বিধান।
২০১১ সাল থেকে, যখন “আরব বসন্তে” অনুপ্রাণিত হয়ে বাহরাইনের মানুষ প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে, তখন থেকে লক্ষ্যনীয়ভাবে বদলে গেছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিস্থিতি। বাহরাইনের শাসকগোষ্ঠীও তার জবাব দিয়েছে সাংবাদিক এবং সমালোচকদের শাস্তি দিয়ে। যেসব সমালোচক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, প্রতিবাদকারীদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছেন এবং বিরোধিতা করেছেন, তাদেরকেই হতে হয়েছে শাস্তির মুখোমুখি। ২০১৭ সালে যে ব্যক্তিই চেম্বার অফ কমার্স, সংসদ, তথ্য মন্ত্রণালয়, কাউন্সিল অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস, আইনের শাসন, ঐতিহাসিক ধর্মীয় চরিত্র এবং বাহরাইনের রাজার সমালোচনা করেছেন – বাহরাইনের শাসকগোষ্ঠী তাকেই গ্রেফতার করেছে বা তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিয়েছে।
আরবি ভাষার দৈনিক আলওয়াসাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকে বাহরাইনে আর কোনো স্বাধীন দৈনিক সংবাদপত্র নেই। বর্তমানে সব সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন কেন্দ্র সরকারি মতবাদ প্রচার করে বা সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সেলফ-সেন্সরশিপের চর্চা করে।
বৈদেশিক প্রতিনিধিদের অনুমতিপত্র সাথে থাকতে হয় এবং সেটা প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। “অতিরঞ্জন, বানোয়াট, প্রতারণামূলক বা মিথ্যা” তথ্যের উপস্থিতি আছে, এমন সংবাদ প্রচার করলে অনুমতিপত্র প্রত্যাহার করা হতে পারে।
অভিবাসন নিয়ে সাংবাদিকতা
বাহরাইনে মানব পাচার নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে আপনি সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবেন কিনা, তা আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। এটি নির্ভর করবে স্টোরি দেখার সময় কর্মকর্তার মানসিক অবস্থার ওপর। উচ্চপদস্থ কারো বিরুদ্ধে না গেলে অরাজনৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বেশ উদার।
তবুও, অনুসন্ধান শুরু করার আগে আপনার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ডিজিটাল নিরাপত্তা, পালানোর রাস্তা, তথ্য ও ছবি সংরক্ষণ, উৎস খোঁজা এবং সাক্ষাৎকার নেয়াসহ সার্বিক বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আরো কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে:
- নজরদারির সম্ভাবনা কতটুকু নিশ্চিত হয়ে নিন। যে মানুষগুলোর সাথে আপনি দেখা করবেন এবং যাদের সাথে আপনি ফাইল লেনদেন করবেন, তাদের সাথে কিভাবে নিরাপদ উপায়ে যোগাযোগ করবেন, তার পরিকল্পনা করুন।
- আপনি যে বিষয়ে লিখতে চান, বাহরাইনের গণমাধ্যমগুলো কিভাবে সে বিষয়গুলো কাভার করে, তা লক্ষ্য করুন। অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে যে সাংবাদিকরা আগে কাজ করেছেন, তাদের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ চান।
- আন্দোলন এবং প্রতিবাদ বাহরাইনের দৈনন্দিন ঘটনা। রাজনৈতিক ঘটনা এড়িয়ে যান, কারণ এর আগে চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিকরা আক্রমণ, আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদেরর শিকার হয়েছেন। যন্ত্রপাতিও জব্দ করা হয়েছে।
কোথায় পাবেন খবর?
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক, এমন অভিবাসন শ্রমিকদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
এনজিও
- মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কারস প্রোটেকশন সোসাইটি
- জেনারেল ফেডারেশন অফ ওয়ার্কারস ট্রেড ইউনিয়নস ইন বাহরাইন
- বাহরাইন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস
সরকার
- লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি ও তাদের সামাজিক মাধ্যম।
- ন্যাশনাল কমিটি অন কমব্যাটিং ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এই কমিটির সদস্যদের নিয়োগ দেন। কমিটির দুইজন সদস্য বাহরাইনের সুশীল সমাজ থেকে নির্বাচিত হন এবং তাদের সাথে অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের থেকে সহজে যোগাযোগ করা যায়।
- মিনিস্ট্রি অফ লেবার অ্যান্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট।
- পুলিশ ডিপার্টমেন্ট অফ দ্য মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেরিয়র।
- মিনিস্ট্রি অফ জাস্টিস অ্যান্ড ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স।
- পাবলিক প্রসিকিউটর’স অফিস।
- দার আল আমান শেল্টার অ্যান্ড চাইল্ড প্রটেকশন সেন্টার।
দূতাবাস
অন্যান্য পরামর্শ
- শুক্রবারে বাব এল-বাহরাইন সুক এলাকায় যান। রাজধানীর এই বাজারে ছুটির দিনে অনেক অভিবাসী শ্রমিক আসেন।
- আদালতে যে আইনজীবীরা অভিবাসী শ্রমিকদের পক্ষে শ্রম বিষয়ক বিবাদ নিয়ে কাজ করেন, তারা বেশ সহায়ক হতে পারেন। বাহরাইনে মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে আইনজীবীদের এলাকা এবং যোগাযোগের তথ্যসহ একটি তালিকা পাওয়া যায়।
সাক্ষাৎকার কীভাবে নেবেন?
সরকার
সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে ভালো পদ্ধতির কোনো স্পষ্ট নিয়ম নেই, কিন্তু তার বিভাগের পদমর্যাদার কাঠামোটি ভালো ভাবে বুঝে নিয়ে সঠিক মানুষের মাধ্যমে আগানো উচিৎ।
আপনাকে ফ্যাক্স বা ইমেইলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে বলা হবে এবং সাক্ষাতের কারণ, আপনার কাজের ধরণ এবং আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে। চেষ্টা করুন অন্তত তিন মাস আগে সাক্ষাতের সময় ঠিক করতে। ধরে নিন, আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে ফিরতি বার্তা এবং সাক্ষাতের নিশ্চয়তা পেতে দেরি হবে। সময় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্রমাগত যোগাযোগ করতে থাকুন।
আপনি সঠিক ঠিকানায় বার্তা পাঠালেও, জবাব আসতে পারে “আমরা আপনার ইমেইল বা ফ্যাক্স পাইনি।” এটি বহুল প্রচলিত অজুহাত। সরকারি ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না, এই কারণে সেই বিভাগে ফোন করে আগে তাদের সাথে যোগাযোগের সঠিক মাধ্যম জিজ্ঞেস করে নিন। আপনার পাঠানো বার্তাটি তারা পেয়েছে কিনা, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
মনে রাখুন, কর্মকর্তারা সাধারণত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে আগ্রহী হন তখনই, যখন তারা ভাবেন, স্টোরিতে তাদের বিভাগের অর্জনগুলোকে তুলে ধরা যাবে। তারা যদি টের পান যে প্রতিবেদনটি সরকারের প্রতি সমালোচনামূলক হবে, তাহলে হয়ত আপনি সাক্ষাতের আবেদনের জবাবে “ইনশাল্লাহ” – “যদি সৃষ্টিকর্তা চান” – শুনতে পাবেন। এটা আপনার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার একটি কূটনৈতিক উপায় হতে পারে।
সাক্ষাতের দিনক্ষণ যদি নির্ধারিত হয়, তাহলে যথাসময় উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন। তবে তারা দেরি করতে পারে। সাক্ষাতের সময় স্বাক্ষর বা ফোন কলের জন্য কর্মচারীদের আনাগোনাও দেখতে পারেন। এতে হতাশ হবেন না, কারণ এটি আপনাকে অসম্মান করার জন্য নয়। বাহরাইন এমনিতে অনেক শিথিল, সহজ এবং সময়ানুবর্তিতার ব্যাপারে বেশ উদার।
অভিবাসী শ্রমিক
অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে সাক্ষাতের সময় এই পরামর্শগুলো কাজে লাগবে:
- নেতৃস্থানীয় কারো মাধ্যমে সাক্ষাৎকারদাতা বাছাই করুন।
- একসাথে সর্বোচ্চ তিন বা চারজন শ্রমিকের সাথে বসুন। বেশি মানুষের সাথে বসলে অন্যদের কৌতূহল সৃষ্টি করতে পারে।
- সবসময় আপনার সোর্সের পরিচয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করুন।
- স্থানীয় সাংবাদিক হলে স্পর্শকাতর রিপোর্ট প্রকাশের সময় আপনার নাম গোপন রাখুন।
- অভিবাসী শ্রমিকদের যাতায়াত আছে এমন কোনো স্থানীয় কফি শপ সাক্ষাতের স্থান হতে পারে (যেমন মানামা সুক-এর ইন্ডিয়ান ডেলিস)। পরিচয় গোপন রাখার জন্য জাঁকজমকপূর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলাই ভালো।
- শ্রমিক ক্যাম্পগুলোতে কেউ ভয় পেয়ে যাওয়ার আগে যথাসম্ভব কম সময় ব্যয় করুন। বেশিরভাগ সময়েই এমন হয় এবং কোনো নিরাপত্তাকর্মী আপনার উপস্থিতি টের পেয়ে তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে পারে। আপনি যদি নারী সাংবাদিক হন, তাহলে আপনার উপস্থিতির সময় আরো কমাতে হবে, কারণ এটি অনেক বেশি কৌতুহল সৃষ্টি করবে। আপনি যদি ক্যাম্পে ক্যামেরা ব্যবহার করতে চান, তাহলে কিসের ছবি তুলবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করুন এবং সময় নষ্ট না করে সরাসরি গিয়ে সেগুলোর ছবি তুলে আসুন।
প্রয়োজনীয় পাঠ
জোরপূর্বক শ্রম এবং মানব পাচার
- মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার অ্যাবিউজ ইন বাহরাইন অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট রিফর্ম এজেন্ডা
- বাহরাইনি অ্যান্টি-ট্রাফিকিং ল ইনক্যাপাবল অফ প্রোটেক্টিং ডোমেন্সটিক ওয়ার্কারস
- লিভিং অ্যাজ কমোডিটিস: হিউম্যান অ্যান্ড সেক্স ট্রাফিকিং ইন দা জিসিসি
- বাহরাইনি অফিশিয়ালস ইউজ ফ্রি মার্কেট ইকোনোমি টু জাস্টিফাই ল্যাক অফ মিনিমাম ওয়েজ
- বাহরাইন’স “থার্ড মিলেনিয়াম স্লেভারি”
- বাহরাইন’স ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম (আরবী)
- ওয়েস্টেড রাইটস (আরবী)
ফ্রি ভিসা
শ্রমিক ক্যাম্প
আর্কাইভ
গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সহায়তায় গাইডটি তৈরি করেছে মাইগ্র্যান্ট-রাইটস। এই অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা। তাদেরকে টুইটারে ফলো করুন @MigrantRights