গণমাধ্যমের পরিবেশ
সংবিধানের ৩৬ এবং ৩৭ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কুয়েতে বাকস্বাধীনতা সংরক্ষণ করা হয়েছে। যদিও এই স্বাধীনতা “সুনির্দিষ্ট আইন দ্বারা” সীমাবদ্ধ।
কুয়েতে আমিরের সমালোচনা করা বেআইনি, এবং করলে পাঁচ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড, শারীরিক লাঞ্ছনা, মারাত্মক পর্যায়ের জিজ্ঞাসাবাদ বা নির্বাসন পর্যন্ত হতে পারে। ইসলাম ধর্ম, নবী বা সৃষ্টিকর্তাকে অসম্মান করে, এমন কোন কিছু প্রকাশ করা বেআইনি। এই বিষয়গুলোকে নেতিবাচকভাবে দেখায়, এমন কিছু প্রকাশ করলে ৫০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি জরিমানা এবং এক বা তার বেশি বছরের জন্য কারাদণ্ড হতে পারে। ক্ষমতাধর কাউকে নিয়ে রিপোর্ট করা বেআইনি না হলেও আপনাকে আটক বা দেশত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে। সরকারী কর্মকর্তা, বিশেষ করে কুয়েতের মাবাহেথ নামক গুপ্ত গোয়েন্দা সংস্থার আন্ডারকভার এজেন্টদের দিয়ে শারীরিক নির্যাতন এবং হূমকির সম্মুখীন হন সাংবাদিকরা।
দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় নৈতিকভাবে আক্রমণাত্মক কন্টেন্টের জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ওপর সেন্সর আরোপ করে। কুয়েতের ২০১৬ সালের ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম আইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন গণমাধ্যম এবং সংবাদ ব্লগের ওপরও অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। আইনত, তাদের লাইসেন্স থাকা আবশ্যকীয়। অবশ্য বিদেশী রিপোর্টারদের চেয়ে কুয়েতের স্থানীয় রিপোর্টারদের সমালোচনা করার স্বাধীনতা বেশি।
খবর ও তথ্যের সন্ধান পাবেন যেখানে
পাচার হওয়া এবং দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তা দেয়, এমন অনেক প্রতিষ্ঠান কুয়েতে কাজ করে। তারা আপনাকে অভিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। অভিবাসী নেতা এবং সমাজসেবকরা বেশ পরিশ্রমী। তারা আপনাকে শ্রমিকদের ক্যাম্প বা আবাসস্থলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারে। ask@fajerthelawyer.com বা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন ফর লিগাল এইড এর মতো আইনজীবী বা আইন বিষয়ক সংস্থা, আপনাকে আইন বিষয়ক পরিস্থিতি বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে। এমনকি তারা আপনাকে স্টোরি খুঁজতে বা শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে সহায়তা করতে পারে।
নিচের এই প্রতিষ্ঠানগুলো অভিবাসন বিষয় নিয়ে কাজ করে:
- কুয়েত ইন্টারন্যাশনাল ল সোসাইটি
- কুয়েত সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস
- আইওএম কুয়েত
- হিউম্যান লাইন অর্গানাইজেশন
- কুয়েত সলিডারিটি সেন্টার
- কুয়েত ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন
- বারিরাহ: ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর দ্য অ্যাওয়ারনেস অফ ডোমেস্টিক ওয়ার্কারস’ রাইটস
- ইনসানি
- এন.ভি আর্থ
- হিকমা
সরকারী উৎস
যখন কোন সরকারি মন্ত্রণালয় বা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করবেন, সশরীরে যান। সম্ভব হলে দলগতভাবে এবং অবিশ্বাস বা সন্দেহ এড়াতে স্থানীয় কাউকে সঙ্গে নিন। সাংবাদিক পরিচয় জানালে তা সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত আপনি যখন স্পর্শকাতর তথ্য চাচ্ছেন। কোনো প্রকল্প বা গবেষণায় কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিলে তুলনামূলক বেশি সহায়তা পাওয়া যায়। মাথায় রাখুন, যে তথ্য আপনি পেতে যাচ্ছেন সেটি মৌখিক হতে পারে, কারণ সরকারী কার্যালয়গুলো সব তথ্য নথি বা অনলাইনে সংরক্ষণ করে না।
যে জায়গাগুলোতে যেতে পারেন:
- ডোমেস্টিক ওয়ার্কারস’ ডিপার্টমেন্ট ইন আল দাজিজ। এখানকার কর্মচারীদের কাছ থেকে খুব বেশি সহায়তা নাও পেতে পারেন, কারণ সেখানে ‘ইকামাতে’ স্বাক্ষরের কাজে স্থানীয় শ্রমিকদের লম্বা লাইন লেগেই থাকে।
- ডোমেস্টিক ওয়ার্কারস শেল্টার। নির্যাতনের শিকার হয়ে বা পারিশ্রমিকের অভাবে যে স্থানীয় শ্রমিকরা মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে, সরকার তাদের (এবং তাদের সন্তানদের) জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। আপনি যদি কর্তৃপক্ষের সাক্ষাত না পান, তাহলে উপরে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্য নিন।
- রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়া। সংসদ সদস্যরা সক্রিয়ভাবে বিভন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। যেমন এটি কুয়েতের জাতীয় সংসদ মাজলেসালোম্মাহ এর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট।
- উৎস দেশের দূতাবাস তথ্য জানার ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। তারা অভিবাসী শ্রমিক সম্পর্কিত আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও তথ্যের প্রয়োজনীয় উৎস।
ইমপ্যাক্ট তৈরি করা
সংসদের কিছু সদস্য যেহেতু বহিরাগত এবং স্থানীয়দের মধ্যে বিভাজনকে উৎসাহ দেয়, তাই দেশটিতে বহুত্ববাদিতা (Pluralism) নিয়ে আলোচনা যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভিবাসী শ্রমিকদের কথাগুলো তুলে ধরা, সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই এবং অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে অনুসন্ধান কুয়েতে খুবই জরুরী। শুধু প্রবন্ধ দিয়ে বেশি দর্শক বা পাঠকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব না, এটা মনে রাখা দরকার। তাই এই বিষয়গুলোও মাথায় রাখুন:
- ভিডিও শ্যুট করুন। গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য সাক্ষাৎকারদাতার মুখ অস্পষ্ট করে দিন এবং অভিবাসীদের কথাগুলো মানুষকে শুনতে দিন।
- স্টোরির ফলো আপ করুন। প্রকাশ করুন, কিভাবে অভিবাসীদের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের পরিবার বা তাদের আগের পৃষ্ঠপোষকদের সাথে কথা বলুন। মানুষকে সম্পূর্ণ স্টোরিটা জানান।
- মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করুন।
- আপনার বক্তব্য টিভিতে এবং কর্মশালায় তুলে ধরুন।
- সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় কুয়েতী নাগরিকদেরকে অনুরোধ করুন, যেন আপনার কাজগুলো তুলে ধরে। তাহলে বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। তাদের অনেকেই সাহায্য করতে আগ্রহী হবে।
সাধারণ কিছু পরামর্শ
- যখন অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে লিখবেন, মনে রাখুন, অভিবাসীদের স্থান হওয়া উচিৎ স্টোরির একদম কেন্দ্রে।
- আপনার আলোচনার উদ্দেশ্যটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন এবং অভিবাসীদের তথ্য প্রকাশ করার আগে তাদের অনুমতি নিন।
- আপনি নিয়োগদাতার উপস্থিতিতে স্থানীয় শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না। তার বদলে, তারা যখন একা কোথাও যায় -যেমন মসজিদে যাওয়ার সময় – তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন।
- সব অভিবাসী যে কুয়েতের স্থানীয় কারো সাথে খোলাখুলি কথা বলতে স্বস্তি অনুভব করবে, তা নাও হতে পারে।
গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সহায়তায় গাইডটি তৈরি করেছে মাইগ্র্যান্ট-রাইটস। এই অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা। তাদেরকে টুইটারে ফলো করুন @MigrantRights