জমির মালিকানা কার – এই তথ্য খুঁজে বের করা বেশ কঠিন কাজ। সব দেশেই সম্পত্তির নিবন্ধন পদ্ধতি চালু আছে, তবু তথ্যের মান এবং তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলে থাকেন, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশের নিজ মালিকানাধীন জমির আইনগত নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু তাদের এই পরিসংখ্যানও অনুমান-নির্ভর।
তারওপর সম্পত্তির অসম্পূর্ণ বা ভুল রেকর্ড তো আছেই।
২০১৮ সালের একটি ব্লগ পোস্টে বিশ্বব্যাংকের ভূমি বিশেষজ্ঞ ক্লস ডেইনিংগার বলেন, “বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দেশ, তাদের রাজধানীতে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির নিবন্ধন বা মানচিত্র তৈরি করতে পারেনি। রাজধানীর বাইরে তো দূরের কথা, অনেক সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নিবন্ধনই করা হয় না।” বিশ্বব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি রেকর্ডের নিরাপত্তায় ঘাটতির মানে, একই জমি একাধিক মালিকের নামে তালিকাভুক্ত হতে পারে যে কোনো সময়ই।
তারপরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও হংকংয়ের মতো অনেক উন্নত দেশে ভূমি নিবন্ধনের তালিকা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখান থেকে মূল্যবান তথ্য বের করে আনা সম্ভব। রেকর্ডগুলো সাধারণত স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। কেন্দ্রীয় জাতীয় নিবন্ধন এবং অনলাইনে তা না-ও পাওয়া যেতে পারে। ডেইনিংগারের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও কম দেশ ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণ করে।
আরেকটি জটিলতা হচ্ছে. ব্যক্তি-গোপনীয়তা রক্ষার্থে অনেক দেশে সম্পত্তির মালিকের নাম প্রকাশ করা হয় না। উন্নয়নশীল এবং উন্নত – দুই ধরণের দেশেই এমনটা ঘটতে দেখা যায়।
খুঁজে পাওয়া সম্ভব এমন যে কোনো ভূমি রেকর্ড পেতে আপনাকে সাহায্য করবে জিআইজেএনের এই নির্দেশিকা। শুরুতেই থাকছে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় উৎসগুলোর লিংক এবং বর্ণনা।
জমির তথ্য কী কাজে আসে?
অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির একটি বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম হচ্ছে জমি বা বাড়ী। এই সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোতে, সম্পত্তির মালিকানা খুঁজে বের করা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এবার জেনে নিন সম্পত্তির রেকর্ড কোথায় কাজে আসে:
- রাজনীতিবিদদের সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ।
- অর্থ পাচারের ঘটনা উন্মোচন।
- পরিবেশ অপরাধী সনাক্তকরণ।
- আদিবাসী শোষণের চিত্র তুলে ধরা।
- প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির গতিপথ অনুসরণ।
- অনিরাপদ বা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জড়িতদের খুঁজে বের করা।
- বৈষম্যের স্বরূপ ব্যাখ্যা।
জমির রেকর্ড ব্যবহার করে তৈরি কয়েক ডজন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সংকলন করেছে জিআইজেএন। উদাহরণগুলো দেখে নিতে পারেন এখানে।
মানসম্পন্ন ভূমি রেকর্ডের অনুপস্থিতি নিজেই একটি রিপোর্টের বিষয়বস্তু। এখানে বেশ কিছু দরকারি উৎসের সন্ধান পাবেন, যা আপনাকে এই বিষয়ে রিপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করবে।
কী খুঁজবেন?
ভূমি রেকর্ড অনুসন্ধানের জন্যে আপনাকে নিজ দেশের আইন বুঝতে হবে সবার আগে:
- সম্পত্তির অধিকার নিয়ে কী আইন রয়েছে এবং কোন বিষয়ে রেকর্ড রাখা বাধ্যতামূলক?
- সম্পত্তির সীমানা সংক্রান্ত তথ্য কোথায় সংরক্ষণ করা হয়?
- সম্পত্তি বিক্রি হওয়ার পর তা কিভাবে হস্তান্তর করা হয়?
- কিভাবে সম্পত্তির পরিমাপ করা হয় এবং কর নির্ধারণ করা হয়?
সম্পত্তির রেকর্ড খুঁজে বের করতে এই মৌলিক জ্ঞানগুলো থাকা জরুরী। তথ্যের সম্ভাব্য উৎসগুলো হচ্ছে স্থানীয় অফিস, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং আইনজীবীরা। নিচের আরো কিছু উৎসের কথা বলা হয়েছে।
স্থানীয় আইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরী, কেননা দেশভেদে সম্পত্তি আইন এবং প্রশাসনিক কাঠামোয় পার্থক্য রয়েছে। ভূমি রেকর্ডের জটিল মারপ্যাঁচ বুঝতে স্থানীয় বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।
অনেক জায়গায় জমির ওপর লেখা “নাম” মালিকানার আনুষ্ঠানিক রেকর্ড হিসাবে গণ্য করা হয়। জমির সীমানা এবং অবস্থানকে বলা হয় “ক্যাডেস্টার” রেকর্ড। এই রেকর্ড রাখার জায়গা আলাদাও হতে পারে। জমির দাম, প্রযোজ্য কর, জমির ব্যবহার এবং স্থাপনা সংক্রান্ত তথ্য অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকে।
মালিকানার রেকর্ড ব্যবস্থাপনায়ও একেক জায়গায় একেকরকম।
কিছু কিছু জায়গায় জমি বিক্রি হয় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়। নাইজেরিয়া এবং বেলারুশে, জমির মালিকানার প্রমাণপত্রে লেখা থাকে, সেই জমি কতদিন পর্যন্ত ভোগদখল করা যাবে। ভিয়েতনামে ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না। সেখানে দলিল মানে “ভূমি-ব্যবহারের অধিকার পত্র”। আর জাপানে ভূমি এবং স্থাপনাকে আলাদাভাবে দেখা হয়।
ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ভূমি রেজিস্ট্রি এবং ক্যাডেস্টারে কেবল গ্রামীণ এলাকার জমি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। শহরের জমির তথ্য তত্ত্বাবধান করে অঙ্গরাজ্য এবং পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রে ভূমি মালিকানা রেকর্ড থাকে স্থানীয় পর্যায়ে, সাধারণত কাউন্টি নথিরক্ষক বা কর নির্ধারকের কার্যালয়ে।
অনেক জায়গায়, বিশেষত সাব-সাহারান আফ্রিকায় অল্প কিছু জমির নিবন্ধন বা মালিকানা নির্দিষ্ট করা আছে। সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় বেশিরভাগ জমির মালিকানা নির্ধারিত হয় প্রথাগত নিয়ম মেনে, কাগজে-কলমে নয়। তাই মালিকানার দাবী নিয়ে প্রায়ই সংঘাত দেখা দেয়। তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে গিয়ে সরকারও অহরহ বিতর্কের জন্ম দেয়। প্রথাগত শর্তের ভিত্তিতে জমির সত্ত্ব নির্ধারণের প্রবণতা যে কতটা ব্যাপক, সেই ধারণা পাবেন ল্যান্ডমার্কের এই ম্যাপ থেকে।
স্থানীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটা এ কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যা পেতে পারেন
এতো পার্থক্য এবং জটিলতার পরও সম্পত্তির রেকর্ড আপনার অনুসন্ধানকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
এসব রেকর্ডে আপনি সম্ভাব্য যা যা পেতে পারেন:
- মালিকের নাম
- ঠিকানা এবং পার্সেল নাম্বার
- সম্পত্তির সীমানার ভৌগলিক বর্ণনা
- সম্পত্তিতে নির্মিত স্থাপনা এবং তার বৈশিষ্ট্য
- সম্পত্তির সর্বশেষ ক্রয়মূল্য
- পূর্ববর্তী ক্রয়-বিক্রয়ের রেকর্ড
- বর্তমান এবং অতীতের নির্ধারিত কর
- যেসব শর্ত মেনে সম্পত্তি ব্যবহারের করতে হবে
- মালিকের অধিকার এবং সীমাবদ্ধতা
- সম্পত্তির নামে ঋণ
- সম্পত্তি সম্পর্কিত আইনগত বিবাদের ইতিহাস
- জমিতে নির্মাণকাজের রেকর্ড
- সম্পত্তি বেচাকেনায় বাধা হতে পারে এমন বন্ধকী ঋণের বিবরণ
এ বিষয়ে সম্যক ধারণা পেতে ঘুরে আসুন ক্যাডেস্টা ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট।
যা খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে
গোপনীয়তা বিষয়ক আইনের কারণে অনেক দেশে জমির মালিকের নাম বের করা যায় না। এটি স্বচ্ছতার পরিপন্থী হলেও অনেক মালিক একে নিরাপত্তা হিসাবে দেখেন।
শুধু আফ্রিকা বা এশিয়া নয়, এমন গোপনীয়তা দেখা যায় জার্মানি, বেলজিয়াম আর স্পেনের মতো কিছু ইউরোপিয় দেশেও।
অবশ্য নেদারল্যান্ডস এবং এস্তোনিয়ায় সব তথ্য অনলাইনেই পাওয়া যায়।
অনেক সময় মালিকানার তথ্য উন্মুক্ত হলেও, তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঝামেলা থাকে। কোথাও কোথাও টাকা দিয়ে সেই তথ্য কিনতে হয়, যেমন জ্যামাইকা ও যুক্তরাজ্য। আবার ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ দা কঙ্গোতে (বাংলাদেশেও) ভূমি রেকর্ড অফিসে সশরীরে গিয়ে এই তথ্য খুঁজে বের করতে হয়। সশরীরে যাওয়া অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
কখনো কখনো দুর্নীতি এবং নথিতে ভুল থাকার কারণেও জমি নিবন্ধনের তথ্যের মান এবং সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন বা কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে সত্যিকারের মালিকের পরিচয় গোপন করা হয়। তখন প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম বের করা আরেক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
হাতে গোনা কয়েকটি দেশে রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের সন্দেহজনক আচরণ কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করতে হয়। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টারি রিসার্চ সার্ভিস ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি প্রকাশনা বের করে। আন্ডারস্ট্যান্ডিং মানি লন্ডারিং থ্রু রিয়েল এস্টেট ট্রানজ্যাকশনস নামের এই প্রকাশনায় “আবাসন খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের সীমিত রিপোর্টিং” সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
যেখানে খুঁজবেন
যদি আশা করে থাকেন একটি আন্তর্জাতিক রেজিস্ট্রি থেকে সব দেশের ভূমি রেকর্ড পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। এমন কিছুর আসলে অস্তিত্ব নেই।
তাহলে শুরু করবেন কোথা থেকে? সেটােই খুঁজে বের করেছে জিআইজেএন। সম্পত্তির তথ্য পেতে হলে সেই দেশের নিজস্ব রেকর্ড ঘাঁটাই ভালো পদ্ধতি। কিন্তু খুঁজবেন কোথায়? নিচে তথ্যের বিভিন্ন দেশের সরকারি উৎস দেওয়া হলো।
আমরা উৎসগুলোকে অঞ্চলের ভিত্তিতে ভাগ করেছি, যাতে আপনি সরাসরি আপনার প্রয়োজনীয় এলাকায় চলে যেতে পারেন।
আঞ্চলিক তথ্যগুলোর নিচে আমরা কিছু দরকারি আন্তর্জাতিক উৎসেরও তালিকা দিয়েছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংকের ডুইং বিজনেস রিপোর্ট। এখানে ১৯০টি দেশের জাতীয় সম্পত্তি নিবন্ধকের তালিকা, সম্পত্তি আইন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। আমরা জানাবো, কীভাবে এখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনতে হয়। তালিকার অন্য আন্তর্জাতিক উৎসগুলো সম্পর্কে বিবরণ কিছুটা সংক্ষিপ্ত। সেখান থেকে কোনো নির্দিষ্ট দেশের আইনী কাঠামো এবং ভূমি ব্যবহার প্রণালী সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ইউরোপ
দি ইউরোপিয়ান ই-জাস্টিস পোর্টাল: ইউরোপিয় কমিশনের বিভিন্ন ভাষার এই ডেটাবেইসে বলা আছে, কোথায় কোন দেশের সম্পত্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। ২৮টি জাতীয় সাবপেইজে গেলে দেখতে পাবেন সেই দেশের ভূমি নিবন্ধন তালিকা। সেখানে আপনি লিংকও পাবেন। ভূমি ও মালিকানা বিষয়ক তথ্যের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে ইইউভুক্ত সব দেশের ভূমি নিবন্ধন তালিকাকে এক জায়গায় আনা হয়।
ইউরোগ্রাফিক্স: ইউরোপের যত ন্যাশনাল ম্যাপিং, ক্যাডেস্টার এবং ভূমি রেজিস্ট্রি কর্তৃপক্ষ আছে তাদের সবার তথ্য এক সাথে পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে এই অলাভজনক সংস্থা। এর “সদস্য” পাতায় অনেক তথ্য রয়েছে। (এটি সব সরকারি উৎস থেকে উন্মুক্ত তথ্য সংগ্রহ নিয়ে ইউরোগ্লোবালম্যাপ প্রকাশ করে।)
ইউরোপিয়ান ল্যান্ড রেজিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন: ইউরোপের সবকটি জাতীয় জমি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের এই জোট ২০১৮ সালে একটি জরিপ করেছে। তাদের তৈরি ল্যান্ড রেজিস্ট্রিস অ্যান্ড ক্যাডেস্টারস ইন ইউরোপে পর্যাপ্ত অনলাইন লিংক নেই। আর ইউরোপে ভূমি সংক্রান্ত জাতীয় কর্তৃপক্ষের যে নেটওয়ার্ক আছে তার সদস্যদের বিবরণ পাবেন এখানে।
ইউনাইটেড নেশন ইকোনোমিক কমিশন ফর ইউরোপ: জাতিসংঘের এই সংস্থাটি গৃহ নির্মান এবং ভূমিসহ অনেক বিষয়ে কাজ করে। এর অনেক রিপোর্টই প্রাসঙ্গিক।
সার্ভে অন ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেমস এবং ইনভেন্টরি অফ ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেমস ইন ইউরোপ অ্যান্ড নর্থ আমেরিকা – প্রতিবেদনগুলোর একটি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে এবং অপরটি ২০০৫-এ। প্রথম প্রতিবেদনটির পরিশিষ্টে গেলে ২৫টি দেশের রেকর্ড ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। এদের মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইসরাইজ, ইতালি, কিরগিজস্তান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্পেন, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্য (ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস)।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ক্যাডেস্টারে জমির দাম, মালিকানা এবং আবাসনের তালিকার জন্য দেখুন ইউনিফাইড স্টেট রিয়াল এস্টেট রেজিস্টার। সম্পত্তি মালিকের নামসহ ভালো তথ্য পাওয়া যেতে পারে রোসরিস্ত্র ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করার মাধ্যমে, তবে বিদেশীদের জন্য এই সুবিধাটি নেই। আরো দেখুন আন্তর্জাতিক অধ্যায়ে লেখা বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেস রিপোর্ট এবং দি গ্লোবাল ওপেন ডেটা ইন্ডেক্স।
পাবলিক সার্ভিস অন দা ম্যাপ (পিডিওকে) একটি মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ডাচ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জিওডেটা সেট প্রকাশ করা হয়।
উত্তর আমেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রে ৩১০০ টির বেশি জায়গায় ভূমি রেকর্ড সংরক্ষিত থাকে। এই তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত।
দলিল এবং স্বত্ব মূলত কাউন্টি এবং মিউনিসিপ্যাল পর্যায়ে রেকর্ডার’স অফিস বা রেজিস্ট্রার অফ ডিডস নামের অফিসে রক্ষিত থাকে। কর নির্ধারকের অফিসে থাকে করের জন্য পরিমাপ করা সম্পত্তির রেকর্ড। অনেক রেকর্ড অনলাইনে পাওয়া যায় (আনুমানিক ১৪০০টি জায়গায়), যদিও সার্চ করার ক্ষমতা সবখানে একরকম নয়। সাধারণত নাম, ঠিকানা বা পার্সেল নাম্বার দিয়ে সার্চ করলে তথ্য পাওয়া যায়। আবার অনেক জায়গায় মালিকের নাম দিয়ে সার্চই করা যায় না।
কিছু বাণিজ্যিক সাইট দেখে নিন যেখানে সম্পত্তির রেকর্ড কোথায় রক্ষিত আছে তা জানা যায়: নেট্রোঅনলাইন, অনলাইনসার্চেস, ট্রুলিয়া, সার্চ এবং সার্চসিস্টেমস.নেট (এদের সবগুলোই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যারা সার্চ সেবা প্রদান করে থাকে)।
ভূমি রেকর্ড গবেষণার জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানোর ধারণাটি বেশ সুবিধাজনক মনে হতে পারে, বিশেষত, যার স্থানীয় বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। লেক্সিসনেক্সিস দিচ্ছে দলিল, বন্ধক এবং কর নির্ধারণ রেকর্ড সহ ৫৬০ কোটিরও বেশি ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তির রেকর্ড খুঁজে দেখার সুবিধা। অন্যান্য সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইউএস টাইটেল রেকর্ড, প্রোটাইটেলইউএসএ এবং রেনোমি (ব্যবসায়িক রেকর্ড এর জন্য)।
সম্পত্তি কেনাবেচার সেবা দেয় যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের সাইট থেকেও ভালো তথ্য পাওয়া যায়। তারা বিনাপয়সায় সরকারি রেকর্ড পাওয়ার অন্যতম উৎস। এমন কিছু সাইট হচ্ছে: জিলো, ট্রুলিয়া বা রিয়ালটর.কম। ব্যবসায়িক সম্পত্তির জন্য দেখুন লুপনেট.কম।
কানাডায় আবাসন রেকর্ডগুলো রাখা হয় প্রাদেশিক পর্যায়ে এবং সেখানে ১০টি প্রদেশেই অনলাইন ব্যবস্থা রয়েছে। লিংকগুলো এখানে: ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অ্যালবার্টা, সাসকাচিউয়ান, ম্যানিটোবা, অন্টারিও, নিউ ব্রানসউইক, নোভা স্কটিয়া, কুইবেক, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড এবং নিউফাউল্যান্ড।
অনেক ব্যবসায়িক সেবা আছে যারা আপনাকে সহজেই তথ্য খুঁজে দেবে। এদের মধ্যে আছে টাইটেল সার্চার্স, ইজিপিপিএসএ এবং স্পিডিসার্চ। কিছু প্রদেশে আঞ্চলিক গবেষণা বিশেষজ্ঞদের তালিকা রয়েছে।
আফ্রিকা
নিউ আমেরিকা লিস্ট অফ ক্যাডেস্টার অ্যান্ড ল্যান্ড টেন্যিয়ার এজেন্সিস: জিআইজেএন এর সাথে শেয়ার করা এই মৌলিক তালিকাটি ২০১৮ সালে তৈরি করে মার্কিন থিংকট্যাংক নিউ আমেরিকা। এর মধ্যে আফ্রিকার ৫০টি দেশে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নাম এবং ঠিকানা রয়েছে। তারা ফিউচার অফ প্রোপার্টি রাইটস নামের একটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে।
ফোকাস অন ল্যান্ড ইন আফ্রিকা: এই এনজিওর ওয়েবসাইটে আফ্রিকার ১৬টি দেশের জাতীয় ভূমি আইন সংক্রান্ত অনেক তথ্য রয়েছে।
আফ্রিকা চেক ফরাসি ভাষায় নাইজেরিয়া এবং সেনেগালের ভূমি আইন এবং রেকর্ডের সারসংক্ষেপ নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে।
ট্রিম্বল’স ল্যান্ড অ্যাডমিশন সলিউশন্স আফ্রিকার ১৫টি দেশের খনন এবং অন্যান্য অনুমোদিত কাজের মানচিত্র যোগান দেয়।
প্লেইস এর একটি প্রবন্ধে জানা যায়, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর সরকার বনাঞ্চল সম্পর্কিত কার্যক্রমের সকল তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করেছে। লাইবেরিয়াও তাদের বনাঞ্চল ব্যবহারের যত চুক্তি আছে, তার সবই প্রকাশ করেছে এবং সিয়েরা লিওন তাদের কৃষি-ভিত্তিক চুক্তির সিংহভাগ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
আন্তর্জাতিক অংশে বিশ্বব্যাংক এর ডুইং বিজনেস রিপোর্ট এবং গ্লোবাল ওপেন ডেটা ইনডেক্স দেখুন।
এশিয়া-প্যাসিফিক
ভারতের একটি জাতীয় পোর্টাল আছে যেখানে অনলাইনে রাজ্যভিত্তিক জমি নিবন্ধন তালিকার লিংক পাওয়া যায়। প্রতিটি রাজ্যেই নিজস্ব ভূমি রেকর্ড/নিবন্ধন তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু এই ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড গুলো অসম্পূর্ণ। এখানে ভূমি নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পটভূমি নিয়ে একটি রিপোর্ট দেওয়া হলো।
ল্যান্ড কনফ্লিক্ট ওয়াচ ভারতের ভূমি-বিষয়ক সংঘাতের মানচিত্র তৈরি করে। তারা প্রতিটি সংঘাতের বিশদ বিবরণ তুলে ধরে।
তাত্ত্বিকভাবে চীনের ভূমি রেকর্ডগুলো উন্মুক্ত, কিন্তু এই তথ্যগুলো কেবল মালিকপক্ষ এবং অনুমোদিত মানুষেরা পান। চীনে কোন ব্যক্তি সম্পত্তির মালিক হতে পারেন না, কিন্তু ব্যবহার করতে পারেন। সাংহাইয়ের জমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিশ্বব্যংক একটি অনলাইন নিবন্ধন ইউআরএলের কথা জানায়। কিন্তু সংস্থাটি মন্তব্য করে, সেখানেও তথ্যের প্রাপ্যতা “কেবল ইন্টারমিডিয়ারি এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট” ব্যক্তিদের জন্যই সীমাবদ্ধ।
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় নিবন্ধন এবং মানচিত্রের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরণের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাক ডুইং বিজনেস রিপোর্ট এর লেখাটি দেখুন।
তবে, হংকংয়ের নিবন্ধন তালিকা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত।
সিঙ্গাপুরের তথ্য পাবেন তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে নিউ আমেরিকার রিপোর্টে পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যে ভূমি রেকর্ড ডিজিটাল করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলা হয়।
বিশ্বব্যাংক এর ডুইং বিজনেস রিপোর্টে এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার চিত্র বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। আরো জানতে পারেন গ্লোবাল ওপেন ডেটা ইনডেক্স থেকে।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য রাজ্যভিত্তিক সাইটগুলো দেখুন।
দক্ষিণ আমেরিকা
মেক্সিকোর রেকর্ড ব্যবস্থাপনা করা হয় রেজিস্ত্রো পুবলিকো দে লা প্রোপিয়েদাদ ফেদেরাল এর মাধ্যমে।
ব্রাজিলে কোন জাতীয় রেজিস্ট্রি নেই। রাষ্ট্রীয় এবং পৌরসভা পর্যায়ে যে কেউ রেকর্ডের জন্য আবেদন করতে পারে, এবং অনেক আবাসন নিবন্ধন কার্যালয় থেকেই রেকর্ডের ইলেক্ট্রনিক, সনদবিহীন প্রতিলিপি পাওয়া সম্ভব। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে সাও পাওলোর রেকর্ড সিস্টেমের বিবরণ পাবেন।
কলম্বিয়া: সুপেরইন্তেনদেনসিয়া দে নোতারিয়াদো ই রেখিস্ত্রো তে মালিকানার ইতিহাস এবং মুক্ত সনদ পাওয়া যায়। নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে যে কেউ তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। সেখানে সারা দেশের সকল সম্পত্তির আইনগত তথ্য রয়েছে।
আর্জেন্টিনা: রেখিস্ত্রো দে লা প্রোপিয়েদাদ ইনমুয়েবলে দেখুন।
এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানামা এবং নিকারাগুয়া: এই পাঁচটি দেশের নিবন্ধন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের জন্য ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন এর ২০০৭ সালের রিপোর্টটি দেখুন।
দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনা কীভাবে হয়, তা জানতে বিশ্বব্যাংক এর ডুইং বিজনেস রিপোর্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক উৎস দেখুন। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টটিতে বেশিরভাগ সময়েই সংশ্লিষ্ট জাতীয় ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত করে এবং সেখানে পাওয়ার মত কী তথ্য আছে তা জানিয়ে দেয়। এর সাথে দেখুন গ্লোবাল ওপেন ডেটা ইনডেক্স।
আন্তর্জাতিক উৎস
বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেস রিপোর্ট: ১৯০টি দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের বাধাগুলো পর্যালোচনা করে। সেখানে ভূমি রেকর্ড সম্পর্কিত তথ্যও থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এবং তাদের ওয়েবসাইট লিংক খুঁজে পাবেন। তথ্য পেতে আপনি এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন: “র্যাংকিংস”-এ ক্লিক করার পর দেশ বাছুন, তারপর রেজিস্টারিং প্রোপার্টি অংশে যান। বিশাল উপসংহারের দিকে নজর না দিয়ে একটি দেশ বেছে নিন। প্রতি দেশের পেইজের নিচের দিকে দুইটি “ডিটেইলস” অংশ রয়েছে। একটির নাম “ডিটেলস…প্রসিডিউর টাইম অ্যান্ড কস্ট” এবং অন্যটি হলো “ডিটেইলস…মেজারিং কোয়ালিটি।”
প্রথমটিতে উল্লেখ করা হয় সম্পত্তি নিবন্ধনের জাতীয় পদ্ধতি, আর দ্বিতীয়টিতে তথ্যের সহজলভ্যতা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মূল্যায়ন হয় একটি দেশের সবচে বড় শহরের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে। একারণে শহরের তথ্যগুলো নির্ভুল থাকে এবং কোথাও অনলাইন ডেটাবেজ থাকলে তার লিংকও পাওয়া যায়। জাতীয় নিবন্ধনের তালিকা কেবল তখনই থাকে, যদি শহরটি একটি জাতীয় নিবন্ধন ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত থাকে। তারপরেও, এখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। দা ল্যান্ড গভার্নেন্স অ্যাসেসমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক নামের আরেকটি প্রকল্প আছে বিশ্ব ব্যাংকের। ৪০টিরও বেশি দেশে ভূমি প্রশাসনের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন পেতে একে ডায়াগনস্টিক টুল হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। তার একটি সূচক হচ্ছে “৪.৪ পাবলিক প্রোভিশন অফ ল্যান্ড ইনফরমেশন।”
ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন: দেশভিত্তিক আইনের জন্য জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও (FAO) এর ফাওলেক্স (FAOLEX) নামের একটি ডেটাবেইজ আছে। সেখানে “ভূমি এবং মাটি” বিভাগটি বিশেষভাবে দেখুন। এছাড়াও জেন্ডার অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস ডেটাবেইজ (জিএলআরডি) পরিচালনা করে ফাও। সেখানে দেশ অনুযায়ী ভূমি অধিকারের ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্যের চিত্র ও ভূমির পরিসংখ্যান এবং সাম্প্রতিক আইন পর্যালোচনার পদ্ধতি (এলএটি) সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
ইউএসএইড ল্যান্ড লিংকস: এই ওয়েবসাইটে ইউএসএইড কাজ করে এমন ৭০টি দেশের জন্য পেইজ রয়েছে। প্রথমে একটি দেশ বেছে নিয়ে তারপর “ল্যান্ড” বাছুন। সাংবিধানিক বিধান এবং সম্পত্তি অধিকার আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “ল্যান্ড ইউজ” এর নিচের “লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক” নামক অংশটি পড়ুন। আপনি সেখানে ভূমি ব্যবহারের কিছু ইতিহাস এবং কিভাবে মানুষ তাদের ভূমি অধিকার সংরক্ষণ করেছে, সে সম্পর্কে তথ্য পাবেন। ইউএসএইড প্রতিটি জাতীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের নিদের পর্যালোচনা উল্লেখ করে এবং অন্যদেরগুলোও এখানে উদ্ধৃত করে।
ল্যান্ড পোর্টাল: এই এনজিওর ওয়েবসাইটে একটি ‘কান্ট্রি‘ বিভাগ রয়েছে, যার মধ্যে আছে প্রায় ৬৭টি দেশের, বিশেষত সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সম্পর্কিত “পোর্টফোলিও”, যার মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং ভূমি ব্যবহারের ওপর গভীর জ্ঞান লাভ করা যায়। এই ওয়েবসাইটের “ডেটা” বিভাগটি ভূমি ভোগদখল বিষয়ক ৩৭টি ডেটাসেটের সাথে এবং বিভিন্ন ভূমি বিষয়ক সাড়ে ছয়শো’রও বেশি “ইনডিকেটর” এর সাথে যুক্ত। “ল্যান্ড গভার্নেন্স ইস্যুজ ইন কনটেক্সট” পেইজটিও দেখুন। ওয়েবসাইটে একটি দারুণ নিউজলেটারও রয়েছে, যাতে আপনি ভূমি বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ পাবেন একসাথে।
গ্লোবাল ওপেন ডেটা ইনডেক্স: এখানে ১০০টি দেশের ১৫ ধরণের উন্মুক্ত সরকারি তথ্যের তালিকা দিচ্ছে ওপেন নলেজ নেটওয়ার্ক। কিছু দেশের ভূমি সংক্রান্ত তথ্যও এখান থেকে পাওয়া যায়। পেইজের ওপরের দিকে থাকা “প্লেসেস” এর ওপর ক্লিক করে তারপর একটি দেশের নামের ওপর ক্লিক করুন। প্রতি দেশের “ব্রেকডাউন” থেকে “ল্যান্ড ওনারশিপ” এ ক্লিক করে তারপর “মেটা ডেটা” এবং/অথবা “ডিটেইলস” এ ক্লিক করুন।
ল্যান্ড ম্যাট্রিক্স – গ্লোবাল ম্যাপ অফ ইনভেস্টমেন্টস: ভূমি অধিগ্রহন সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়া যায় এই ইন্টার্যাক্টিভ মানচিত্রে। এই তথ্য আসে মূলত বিনিয়োগকারী এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে। ডেটাসেট দেখলে বিনিয়োগকারী (বাণিজ্যিক নাম এবং মূল দেশ সহ), বিনিয়োগের পরিমাণ এবং প্রকল্পের অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। তথ্যগুলো সবসময়েই হালনাগাদ করা হয়। তারপরও একে অসম্পূর্ণ বলে বলে মনে করেন এর উদ্যোক্তারা, কেননা তাদের ভাষায় “ভূমির কারবার অস্বচ্ছতার জন্য কুখ্যাত।”
ল্যান্ডমার্ক: গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম অফ ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড কমিউনিটি ল্যান্ডস তৈরি করেছে এই ডেটাবেস। এখানে বিশ্বব্যাপী যৌথ মালিকানার জমি সংক্রান্ত ভূ-নির্দেশক তথ্য পাওয়া যায়। এটি আদিবাসী এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভূমি নথিভূক্তকরণ এবং মানচিত্র তৈরি করার অসংখ্য চলমান স্থানীয়, জাতীয় এবং আঞ্চলিক উদ্যোগকে একক বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে।
ইনভেস্টিগেটিভ ড্যাশবোর্ড: অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট এর তৈরি এই উৎসে কিছু দেশের ভূমি নিবন্ধন তথ্য পাওয়া যায়। নথিগুলো পেতে এখানে সার্চ করুন (অ্যাডভান্সড সার্চ অপশনস এর জন্য “সার্চ” এ ক্লিক করুন)।
ক্যাডেস্ট্রাল টেম্পলেট আরেকটি দারুণ সাইট, যাতে যুক্ত দেশের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে এবং অসংখ্য তথ্য রয়েছে। এখানে ৫৭টি দেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ(নাম এবং যোগাযোগের তথ্য দেওয়া আছে) লেখা রিপোর্ট রয়েছে (পুরনো থাকতে পারে, এজন্য তারিখ দেখে নিন)। তারা ইতিহাস, ভূমি নিবন্ধন ও মানচিত্রায়ন ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট পেশাদারী প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং পরামর্শ দেয়।
অন্য যেখানে খুঁজবেন
যুক্তরাষ্ট্রে লেক্সিসনেক্সিস এর মতো ব্যবসায়িক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পত্তির রেকর্ড, এমনকি মামলার ক্ষেত্রেও সমন্বিত গবেষণায় কাজে লাগানো যেতে পারে।
কিছু গবেষক সরকারি গেজেট এবং সরকারি রেকর্ডের বিভিন্ন প্রকাশনা ব্যবহার করেও সুফল পেয়েছেন। কপাল ভালো হলে সেখান থেকে ভূমি ব্যবহারের ধরণ পরিবর্তন এবং নির্মাণকাজের অনুমতি চেয়ে করা আবেদনও বের হয়ে আসতে পারে।
বিভিন্ন ধরণের ভূমি অধিকারের রেকর্ডও হয়তো পাওয়া যেতে পারে। যেমন, তাঞ্জানিয়ায় একটি পোর্টাল রয়েছে যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য খনন করার অধিকার তুলে ধরা হয়।
কৃষি ভর্তূকির তথ্যও আপনার কাজে আসতে পারে। ইউরোপিয় ইউনিয়নের ফার্মসাবসিডি.ওআরজি দেখুন। ২০১৯ এর শুরুতে সাইটটি উন্নয়নের কাজ চলছিল। এই তথ্যের আর্কাইভ পাবেন এখানে, আর এখানে খুঁজে পাবেন পুরনো আর্কাইভগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ইডাব্লিউজি ফার্ম সাবসিডি ডেটাবেইজ দেখুন।
সরকারি রেকর্ড এর ওপর নির্ভর করার পাশাপাশি, গবেষকরা প্রাতিষ্ঠানিক রিপোর্ট এবং ওয়েবসাইট, গণমাধ্যমের রিপোর্ট, বিজ্ঞাপন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে দেখার পরামর্শ দেন।
আকাশ থেকে তোলা ছবিও পাওয়া যেতে পারে। ওয়ার ক্রাইমস শুডন’ট পে নামের একটি রিপোর্টের জন্য সেন্ট্রি নামের একটি এনজিও গুগল আর্থ প্রো-র স্যাটেলাইট ছবি দিয়ে দক্ষিণ সুদানের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পত্তি অনুসন্ধান করেছিলো।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিষয়ে জিআইজেএন এর উৎস দেখুন।
বেসরকারি খাতের তথ্যও সহায়ক হতে পারে
সরকারি উৎসের পাশাপাশি আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও ঢুঁ মারুন।
প্রপটেক (প্রোপার্টি টেক) আন্দোলন ছড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরণের আবাসন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া সহজ হয়ে উঠছে। অনেক দেশেই এসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বিনামূল্যে, অনলাইনে। আবাসিক এবং ব্যবসায়িক সম্পত্তি কেনাবেচা, ভাড়া বা নির্মাণের জন্য দরকারি সেবা দেয়ার জন্য এখন উদ্ভাবনী অনেক সাইট আছে।
আবাসন বিষয়ক এসব অনলাইন সেবায় হয়তো তথ্যের জন্য টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু তথ্যের জন্য এই খরচটা যৌক্তিক। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠান আছে যারা রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় তথ্য একত্র করে আরও ব্যবহার-উপযোগী করে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের জিলো কিংবা সেখানের বাণিজ্যিক সম্পত্তির জন্য লুপনেট.কম এর মতো জাতীয় সাইটগুলো ঘুরে দেখুন। এরকই রকম, দক্ষিণ আফ্রিকার উইনডিড, চায়নার লিয়ানজিয়া, ভারতের ম্যাজিক ব্রিকস এবং আরো অসংখ্য সাইট রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়েও এমন অনলাইন সাইট রয়েছে, যেমন ডাও জোন্সের ম্যানসন গ্লোবাল। যদিও এখানে প্রধানত বিলাসবহুল বাড়িই দেখানো হয়। এমন সাইটগুলোর মধ্যে গ্লোবাল লিস্টিংস ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে ১০০টিরও বেশি দেশের লক্ষাধিক সম্পত্তির তালিকা রয়েছে।
২০১৮ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০০টি দেশ এবং ১৫৮টি শহর নিয়ে দ্বিবার্ষিক গ্লোবাল রিয়াল এস্টেট ট্রান্সপারেন্সি ইনডেক্সে জমি ব্যবস্থাপনায় উন্নতির চিত্র উঠে এসেছে। যদিও তারা মনে করে ”এই উন্নতি আকাঙ্ক্ষার সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ।” এই তালিকাটি করেছে শিকাগো-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জোন্স ল্যাং লাসাল, ইনকর্পোরেশন, যার মধ্যে রয়েছে সাত ধরণের জমি নিবন্ধন তথ্য। তাদের বিচারে সব মিলিয়ে, যুক্তরাজ্য স্বচ্ছতায় শীর্ষে, আর ভেনেজুয়েলা সবার নিচে।
এছাড়া আর কারা?
চিন্তা করুন, কারা এই ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত এবং সম্পত্তির ব্যাপারে তথ্য রাখে?
কে সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রয় করছে, সে খোঁজখবর রাখতে হয় আবাসন ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানদেরকে। কার কাছে কী তথ্য পাবেন, তা নির্ভর করবে আপনার এলাকার অবস্থার ওপর। কিছু দেশে আইনজীবী এবং বিশেষজ্ঞরা ভূমি নিবন্ধন এবং মালিকানা অনুসন্ধান করেন। জমির সার্ভেয়ররা অনেক সময় তথ্য ফাঁস করতে পারে।
ভূমি অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজে আসতে পারে। যেমন, কঙ্গো, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে প্রকল্প পরিচালনা করছে, ক্যাডেস্টা ফাউন্ডেশন। তারা অনেক সময় সরকারি নিবন্ধনের পাশাপাশি বেসরকারি নিবন্ধন তালিকা তৈরির জন্য মানচিত্র এবং স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করছে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে ভাড়াটিয়া অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন একটি সাইট তৈরি করেছে যেখানে কোন সম্পত্তি কার মালিকানাধীন, সেটা জানার সাথে সাথে সেই মালিকের আর কী কী সম্পত্তি আছে, তাও জানা যায়।
ওয়েবসাইটে গেলে অপ্রত্যাশিতভাবেও আপনি অনেক কিছু পেয়ে যেতে পারেন। আপনি কী দেখছেন?
সব কিছুর পর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কৌতূহলী পড়শীরা তো আছেন।
এই গাইডটি সম্পাদনা করেছেন জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের পরিচালক টবি ম্যাকিনটশ। তিনি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক রিপোর্টার ছিলেন এবং ৩৯ বছর ধরে বুমেরাং বিএনএ এর সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি অলাভজনক ওয়েবসাইট ফ্রিডমইনফো.ওআরজি এর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। টবি আইঅনগ্লোবালট্রান্সপারেন্সি.নেট নামের একটি ব্লগ চালান।