প্লেনস্পটিং: বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ ট্র্যাকিংয়ের হালনাগাদ গাইড

English

Planespotting flight tracking resources map of southern England

ছবি: স্ক্রিনশট, এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ

বিশ্বজুড়ে প্লেনস্পটিং ও ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ের নির্দেশিকাটি জিআইজেএন প্রথম প্রকাশ করে ২০১৯ সালে। কিন্তু ইউক্রেনে ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর থেকে অনেক রুশ অলিগার্ক তাদের সম্পদ নিয়ে দেশ ছাড়তে শুরু করে এবং টুইটারে রিয়েল টাইমে প্লেন ট্র্যাকিং থেকে বটগুলোকে বিরত রাখতে ইলন মাস্ককেও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক এই পরিবর্তনগুলোকে তুলে ধরতে আমরা আমাদের রিপোর্টিং নির্দেশিকাটি হালনাগাদ করেছি। এটি হালনাগাদের কাজে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ডিক্টেটর অ্যালার্টের পরিচালক ইমানুয়েল ফ্রয়েডেনথালের বিশেষজ্ঞ অবদানের জন্য জিআইজেএন কৃতজ্ঞ।

বিমান ট্র্যাকিং একটি অমূল্য অনুসন্ধানী হাতিয়ার।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা দুর্নীতি উন্মোচন, যুদ্ধের গতিবিধি অনুসরণ, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের ট্র্যাক করা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা বোঝাতে বিমানের তথ্য ব্যবহার করেছেন।

সব বিমানের একটি স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ নম্বর থাকে। বিমানের গতিপথ অনুসরণ এবং সেগুলোর মালিকদের শনাক্ত করতে এই নম্বর ব্যবহার করা যায়। সবসময় না হলেও, কখনও কখনও তো বটেই।

বাণিজ্যিক ও অলাভজনক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ফ্লাইটের তথ্য পাওয়া যায়। সংস্থাগুলো অনেক ফ্লাইটের ডেটা জড়ো করে এবং তা সহজে পাওয়ার উপায় করে দেয়। ফলে নির্দিষ্ট বিমানের গতিবিধি অনুসরণ, নির্দিষ্ট স্থানে নজর রাখা, ধরন চিহ্নিত করা এবং আরো অনেক কিছুই সম্ভব হয়।

বিমানে থাকা অবস্থান শনাক্তকরণ ব্যবস্থার কারণে প্লেনস্পটিং সম্ভব হয়। এর একটি প্রাথমিক প্রযুক্তি এডিএস-বি, ইংরেজিতে যার অর্থ হলো অটোমেটিক ডিপেন্ডেন্ট সার্ভেইল্যান্স-ব্রডকাস্ট। এডিএস-বি সংকেত সবার জন্য উন্মুক্ত এবং শৌখিন পর্যবেক্ষকেরাও এই সস্তা এডিএস-বি ট্র্যাকিং স্টেশনগুলো (১০ থেকে ২০০ মার্কিন ডলার) ব্যবহার করতে পারেন।

অনেক ওয়েবসাইটে ফ্লাইটের গতিপথ পোস্ট করা হয়, ফলে প্রাথমিক পর্যায়ের ট্র্যাকিং বেশ সহজ হয়। তবে কম্পিউটারের সাহায্যে র’ (অপ্রক্রিয়াজাত) ডেটা বিশ্লেষণ করে আরও অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য পাওয়া সম্ভব, যা চলাচলের প্রবণতা জানতে এবং অ্যালার্ট তৈরিতে সহায়তা করে।

অনেকগুলো জটিলতার কারণে প্লেন-ট্র্যাকিং বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিমানচালক ট্র্যাকিং সংকেত বন্ধ রাখতে পারেন। জাতীয় আইনানুসারে, কোনো কোনো বিমানের জন্য কিছু এলাকায় ফ্লাইটের স্থানাঙ্ক জানানোর বাধ্যবাধকতা থাকে না। সামরিক বিমান ট্র্যাক করা বেশ কঠিন (তবে অসম্ভব নয়)। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিধি বিধানের কারণে ব্যক্তিগত জেটগুলোর জন্য বেনামী ফ্লাইট পরিচালনা সহজ হয়৷ আর এডিএস-বি এর বিস্তার সীমিত, কারণ বিশ্বের অনেক প্রান্তে রিসিভিং স্টেশনের স্বল্পতা আছে।

অনেক শৌখিন পর্যবেক্ষণকারী বিমান ট্র্যাকিংয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন (যারা “প্লেনস্পটার” বা “এভিয়েশন গিক” নামে পরিচিত)। এই উৎসাহী কমিউনিটি সাংবাদিকদের জন্য সম্ভাব্য রিসোর্স। অনেক প্লেনস্পটার অস্বাভাবিক বিমানের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে বিমানবন্দরের কাছে অবস্থান করেন। এমনকি এয়ারপোর্ট স্পটিং নামে একটি ওয়েবসাইট আছে যেখানে বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দরে কোথায় দাঁড়াতে হবে, এমন তথ্যও থাকে।

অন্য স্পটাররা তাদের কম্পিউটারে আস্থা রাখেন। সেলিব্রিটি, ব্যবসায়িক নির্বাহী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে মানুষ পছন্দ করে। অনেক স্পটার যুদ্ধাঞ্চলে চলাচলরত ফ্লাইটের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখে।

বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ককে বিরক্ত করার কারণে একজন প্লেনস্পটারের কর্মকাণ্ড সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জ্যাক সুইনি এমন একটি টুইটার বট তৈরি করেছিলেন যা মাস্কের প্রধান জেটের (এন৬২৮টিএস) গতিবিধি পোস্ট করতে পারে। টুইটারের নতুন মালিক হিসেবে মাস্কের প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল সুইনি এবং রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা সরবরাহে জড়িত অন্যান্য স্পটারদের ফিড বন্ধ করা। 

এরপর সুইনি একটি সাবরেডিট অ্যাকাউন্ট (r/ElonJetTracker) চালু করেন এবং টুইটারে (@elonjetnextday) নতুনরূপে ফিরে আসেন। রিয়েল-টাইম অবস্থানের তথ্য সম্বলিত পোস্টে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে টুইটারের নতুন নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে তাঁর টুইটার ফিডে তথ্য দিতে এখন ২৪-ঘন্টা দেরি হয়।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে টুইটার তাদের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস (এপিআই) ব্যবহারের জন্য চার্জ ধার্যের ঘোষণা দিয়ে আরেকটি বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অনেক প্লেনস্পটার লাভের জন্য নয়, বরং বিনোদনের খোরাক হিসেবে তথ্য পোস্ট করেন। টুইটারের ঘোষণার পর ধারণা করা হচ্ছিল, খরচের কারণে তাদের কর্মকাণ্ড কমে যাবে বা থেমে যাবে।

ছবি: পিক্সাবে

ফ্লাইট তথ্যের প্রাথমিক উৎস

রিয়েল-টাইম ফ্লাইটের তথ্য হাতের নাগালেই পাওয়া যায়, যার বেশিরভাগই মেলে বিনা খরচে।

ট্র্যাকিং সাইটগুলোর বৈশিষ্ট্যে ভিন্নতা থাকে। যেমন, ঐতিহাসিক ডেটার জন্য অনেক সময় সাবস্ক্রিপশন এবং/অথবা ফিস দিতে হয়। তবে, প্রাথমিক তথ্যের জন্য খরচ অনেক কম (প্রতি মাসে ৫ থেকে ১০ মার্কিন ডলার) আর মূল্যবান তথ্যের জন্য খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।

এই ওয়েবসাইটগুলো অনেকটাই বিশ্বজুড়ে অ্যান্টেনা বসানো শৌখিন পর্যবেক্ষকদের ওপর নির্ভর করে। নিজেদের অ্যান্টেনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য যারা ওয়েবসাইটগুলোকে “সরবরাহ” করে, তারা বেশ ব্যয়বহুল সাবস্ক্রিপশন বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ পান।

সকলের জ্ঞাতার্থে দ্রষ্টব্য: কিছু ট্র্যাকিং সাইট সাংবাদিকদের সুযোগ দেয় এবং বিনামূল্যে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। দরকার হলে দ্বিধা ছাড়াই তাদের জিজ্ঞেস করুন। এছাড়াও সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য কিছু সাইট চ্যাট বোর্ড ও নির্দেশনামূলক ব্লগ জুড়ে দিয়েছে।

প্লেন ট্র্যাকিংয়ের প্রধান সাইটগুলো হলো:

এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ – এই সাইটটি অন্যান্য ফ্লাইট-ট্র্যাকিং সেবাগুলোর তুলনায় বেশি ফ্লাইট সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। এটিকে পছন্দের কারণ হলো, মার্কিন বিধিবিধানের আওতায় বেনামী ফ্লাইট পরিচালনার অনুরোধ জানানো মার্কিন বিমানের তথ্য এই সাইট ফিল্টার করে না৷ ( এ সম্পর্কিত আরও তথ্য নিচে দেওয়া হয়েছে) এখানে বিনামূল্যে যেকোনো বিমানের পুরনো ফ্লাইট-তথ্য খোঁজা যায়। ট্র্যাকিং ম্যাপে চোখ রাখুন, তারপর যে কোনো প্লেনে ক্লিক করুন বা সার্চ  করুন। বাম প্যানেলে, “হিস্ট্রি” দেখুন। অপ্রিক্রিয়াজাত ডেটার জন্য সাধারণত খরচ হয়। মানচিত্র সম্পর্কিত সহায়তা পেতে  এখানে দেখুন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এডিএস-বি এক্সচেঞ্জকে জেটনেটের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এতে কিছু ব্যবহারকারী উদ্বিগ্ন হলেও জেটনেট ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।

ইকারাস ফ্লাইটস – অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিফরঅ্যাডস) তৈরি করা এই ফ্লাইট-ট্র্যাকিং টুল এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ ডেটা ব্যবহার করে। এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। যেমন: ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে পারে, আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ বিমানের গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারে এবং উড়োজাহাজের মালিকানা সম্পর্কিত ডেটা জানতে চাইতে পারে। ইকারাস ফ্লাইটস সবাই ব্যবহার করতে পারে, তবে বিনামূল্যে সেবা পেতে এটি ব্যবহারে আগ্রহী অনুসন্ধানকারীদের অবশ্যই সিফরঅ্যাডস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

ওপেন স্কাই নেটওয়ার্ক হচ্ছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা। তারা দাবি করে, বিশ্বে বিমান চলাচলের সবচেয়ে বড় সার্ভেইল্যান্স ডেটার ভান্ডারটি তাদের দখলে। “আমরা প্রতিটি বিমান থেকে পাওয়া প্রতিটি বার্তাই সংরক্ষণ করি,” জিআইজেএনকে জানান তাদের একজন স্বেচ্ছাসেবী। তাদের এয়ারক্রাফট ডেটাবেজ-এ গিয়ে  উড়োজাহাজের লেজে থাকা নম্বরটি দিয়ে অনুসন্ধান করলে নিবন্ধন তথ্য, ফ্লাইট ইতিহাস এমনকি সেটি আকাশে নাকি মাটিতে, তা-ও জানিয়ে দিবে। এক্সপ্লোরার ফিচারে গেলে, যেসব উড়োজাহাজ আকাশে আছে শুধু সেগুলোই দেখাবে। যত উড়োজাহাজ ট্র্যাক করা হয়েছে তার সবগুলোর ৩০ দিনের ইতিহাসও দেয়া আছে। জরুরী সতর্কবার্তার তালিকা নিয়ে রয়েছে আরেকটি ফিচার।

ওপেনস্কাই মূলত একাডেমিক ও অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি। তবে সুনির্দিষ্ট অনুরোধ জানালে তারা সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা করে। ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং “পরিচিতি বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের লাভবান করে,” এমন বিষয়ে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করেছে।

জেটনেট এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ কেনার পর থেকে দুটি নতুন সাইটের আবির্ভাব হয়েছে। অন্তত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিক পর্যন্ত দুটোই বেশ কম ফিডার ও কম কভারেজ এবং আনফিল্টার্ড বলে মনে হয়েছে।

সেগুলো হলো:

দ্য এয়ারট্রাফিক ডট কম – জ্যাক সুইনি “এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল ডিসকর্ড সার্ভারের সদস্যদের” চালু করা একটি সাইট, যেটি “সবসময় খোলা ও আনফিল্টার্ড থাকার” কথা।

এডিএসবি ডট ফাই – “একটি কমিউনিটি-পরিচালিত ফ্লাইট ট্র্যাকার, যেখানে বিশ্বজুড়ে ৫০০ টিরও বেশি সক্রিয় ফিডার” আছে। এই ট্র্যাকারে “বিশ্বব্যাপী এয়ার ট্রাফিক ডেটায় উন্মুক্ত ও আনফিল্টার্ড অ্যাক্সেস” নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

অন্যান্য ট্র্যাকিং সোর্স

অল্প কয়েকটি ট্র্যাকিং সেবা রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং ম্যাপ এবং বিমানের সাম্প্রতিক ভ্রমণগুলো বিনামূল্যে দেখাসহ আরও বেশকিছু সুবিধা দেয়।

তবে, এই ফ্লাইট-ট্র্যাকিং সেবাগুলো মালিকের অনুরোধক্রমে যে কোনো বিমানের তথ্য সরিয়ে নেয়৷ তবুও, সেগুলোর কভারেজ বিশ্বের কিছু অঞ্চলে (যেমন আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা) এডিএস-বি এক্সচেঞ্জের চেয়ে অনেক ভালো।

বিমান ছাড়ার সময়ের নোটিফিকেশন ও ঐতিহাসিক ফ্লাইট সম্পর্কিত ডেটা ব্যবহারের সুবিধা সহ বেশ কিছু সুবিধা অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়ে থাকে।

আরও কয়েকটি ট্র্যাকিং সেবাদাতা সাইট: এয়ার ফ্লিটস্,অ্যাভ ডেল্ফি, ফ্লাইট স্ট্যাটস্, ফ্লাইট বোর্ড, ফ্লাইট ভিউ, ফ্রিডার, প্লেন ম্যাপার, প্লেনপ্লটার, এবং স্কাইস্ক্যান ওয়ার্ল্ড

বাণিজ্যিক বিমান ভ্রমণকারীদের জন্যেও কিছু সাইট রয়েছে

এছাড়াও বিশেষায়িত কয়েকটি সাইট আছে। এগুলো হলো:

সামাজিক মাধ্যমও প্লেনস্পটারদের খুঁজে পাওয়া তথ্যে ভেসে যায়। টুইটার হ্যাশট্যাগগুলো দেখুন: #এভিয়েশন, #অ্যাভগিক, #প্লেনস্পটিং, #ফ্লাইট এবং #মিলঅ্যাভগিক

বেশি টুইটকারী অনেকের মধ্যে কয়েকজন হলো: এভারগ্রিন ইন্টেল @vcdgf555, Gerjon @Gerjon, Aircraft Spots @AircraftSpots, SkyScanWorld @scan_sky, এবং Avi Scharf @avischarf।

এছাড়াও জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিয়ে বেলিংক্যাটের ডিসকর্ড চ্যানেল দেখুন।

ট্র্যাকিংয়ের প্রাথমিক ধারণা

ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলো বিমান শনাক্তের জন্য উপযোগী তথ্য তুলে ধরে।

“হেক্স কোড” নামে একটি শনাক্তকারণ চিহ্ন আছে (তবে অনেক সময় এস-মোড বা আইকাও বলা হয়)। ছয় বা সাত অক্ষর ও সংখ্যার এই সিরিজটি সরকারের জন্য বরাদ্দকৃত আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা ((ICAO) এর ২৪-বিটের সাংকেতিক ঠিকানা থেকে নেওয়া হয়, যা থেকে কোডে থাকা বিমান নিবন্ধনের দেশ সম্পর্কে জানা যায়। বিমান বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত হেক্স নম্বর বদলায় না। নীতিগতভাবে, এটি বিমানের স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ চিহ্ন, আর ট্র্যাকিং অ্যান্টেনাগুলো এই তথ্যই সংগ্রহ করে।

দ্বিতীয়ত, সব উড়োজাহাজের লেজের দিকে একটি শনাক্তকরণ চিহ্ন বা “টেইল নম্বর” থাকে (বা থাকা উচিত)। দেখার সুবিধার্থে এটি কমপক্ষে ১২ ফুট উচ্চতায় স্পষ্ট করে লেখা হয়। এই সংখ্যাগুলো হলো সংক্ষিপ্ত আলফানিউমেরিক স্ট্রিং, যা বিমান নিবন্ধনের দেশ নির্দেশ করতে অক্ষর দিয়ে শুরু হয়, (যুক্তরাষ্ট্রের জন্য N, জার্মানির জন্য D, ইত্যাদি)। উইকিপিডিয়ায় বিমান নিবন্ধন উপসর্গের (প্রিফিক্স) একটি সমৃদ্ধ তালিকা রয়েছে। এরপর থাকে কয়েকটি সংখ্যা এবং/অথবা নির্দিষ্ট বিমানের জন্য নির্দিষ্ট অক্ষর। (সামরিক বিমানগুলো বিভিন্ন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে।)

এছাড়াও “কল সাইনের” ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বিমান চালক সেই ফ্লাইটে ঢুকানোর যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, কমবেশি তাই হলো কল সাইন। বাণিজ্যিক ফ্লাইটে এর ফ্লাইট নম্বর হবে অনেকটা এমন – ডেল্টা এয়ারলাইন্সের হনলুলু থেকে মিনিয়াপোলিস পর্যন্ত  ফ্লাইট৩০৭ এর জন্য ফ্লাইট নম্বর হবে DAL307.

মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য খোঁজার চাবিকাঠি হলো হেক্স কোড ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর। ফ্রান্সে কখনও কখনও ব্যক্তিগত বিমানের জন্য বিমানের নিবন্ধন নম্বরই কল সাইন। উচ্চ-পদস্থ বেসামরিক কর্মচারীদের জন্য অনেক সময় কল সাইন পরিবর্তিত হয়, যেমন ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্টের জন্য CMR001, বা ফরাসিদের জন্য COTAM001.

Russian registered plane tail number flight tracking resource

ম্যাকস ২০১৯ ইন্টারন্যাশনাল এয়ার শোতে একটি সাইটেশন জেটে “RA” (রাশিয়ায়-নিবন্ধিত) টেইল নম্বর দেখা যাচ্ছে।  ছবি: শাটারস্টক

মালিকানা সনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জ

বিমানের মালিকদের সনাক্ত করা সম্ভব, তবে কখনও কখনও কঠিন।

বেশিরভাগ দেশ তাদের মালিকানা সংশ্লিষ্ট জাতীয় “রেজিস্ট্রি” প্রকাশ করে না। অনেক বিমান এমন দেশে নিবন্ধিত হয়, যেখানে নাম প্রকাশ না করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়, যেমন আরুবা (নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত)। বিমানের মালিক কোথায় থাকেন, নিবন্ধনে তা উল্লেখ  করার প্রয়োজন হয় না।

প্রায় ৬০ টি দেশের সরকার মালিকানা সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রকাশ করে।কয়েকটি মোটামুটি ব্যবহার উপযোগী। কিছু দেশের ক্ষেত্রে অনলাইন সার্চ ও ডেটা ডাউনলোড করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে বিমানের মালিকানা ও বাহ্যিক পরিবর্তন সম্পর্কিত ব্যাপক তথ্য দেয়া হয়।

অনেক সময় প্রকাশিত তথ্য থেকে বিমানের ধরণ ও মালিকের নাম ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। কিছু রেজিস্ট্রি প্রতিদিন হালনাগাদ হয়। কিন্তু এমনও অনেক রেজিস্ট্রি আছে, যা মাসে বা বছরে একবার হালনাগাদ হয়।

মালিকানা সম্পর্কিত তথ্যে জালিয়াতি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত মালিক কোনো শেল কর্পোরেশন বা প্লেন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। তাই বিমানের প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে, সরকার বিদেশি মালিকদের মার্কিন ট্রাস্টির কাছে মালিকানা স্থানান্তরের অনুমতি দেয়।

কিছু ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটে মালিকানার তথ্য থাকে। তবে সাধারণত সোর্স দেওয়া থাকে না এবং সাবস্ক্রিপশন ফি থাকতে পারে।

মনে রাখার মতো আরও কিছু বিষয়:

বিমানের মালিককে সবসময় পাওয়া যায় না। অনেক সময় জেট ভাড়ায় চলে বা মেইনটেন্যান্স সাইটে ঘুরে বেড়ায়। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন বিমান উড়ে যাওয়া মানে এই নয় যে তিনি এই বিমানে রয়েছেন। যাত্রী “তালিকা” সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়, তাই যাত্রীদের শনাক্ত করা কঠিন। ভেতরে কে বসে আছে তা নিশ্চিত হতে সামাজিক মাধ্যমে ঘাঁটাঘাঁটি করা বা পুরানো ধাঁচের সাংবাদিকতার প্রয়োজন হয়। সরাসরি পর্যবেক্ষণে ফলাফল আসতে পারে, এবং বিমানবন্দরে অনেক লোক কাজ করে, যারা কথা বলতে পারে। অন্যভাবে, যাত্রীরা ইনস্টাগ্রামে জাহির করতে নিজেরাই তথ্য দিয়ে থাকে।

নিবন্ধন তথ্যের সোর্স

মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য সহ কিছু রিসোর্স এখানে তুলে ধরা হলো। সেই সঙ্গে রয়েছে বিনামূল্যে ও সাবস্ক্রিপশন সংশ্লিষ্ট তথ্য।

সার্চ করার সুবিধা রয়েছে এমন কয়েকটি রেজিস্ট্রির তালিকা এখানে দেয়া হলো:

আরো কয়েকটি সম্ভাবনা:

  • উইকিপিডিয়াতে ন্যাশনাল এভিয়েশন অথরিটি বা জাতীয় বিমান পরিহন কর্তৃপক্ষের একটি তালিকা রয়েছে
  • কর্পোরেট জেট ইনভেস্টর তাদের অফিসিয়াল গাইড টু এয়ারপ্ল্যান রেজিস্ট্রেশন ২০২৩ এ জাতীয় নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছে।
  • রাশিয়ান প্লেনস ডট নেট রুশ বিমান সম্পর্কিত একটি সার্চযোগ্য সাইট। সাইটটিতে একটি নোট আছে: “ইউক্রেনে রুশ ফেডারেশনের বিশেষ অপারেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের রাষ্ট্রীয় বিমান চলাচলের ছবি সাইটে প্রকাশিত হয় না।”

সামরিক ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ের বিশেষ সাইট

উপরে তালিকাভুক্ত সাধারণ সার্চ সাইটগুলো সামরিক ফ্লাইট নিয়ে কাজ করে৷ এডিএস-বি এক্সচেঞ্জের একটি ফিল্টার আছে যা কেবল সামরিক বিমান সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরে।

কয়েকটি সাইট সামরিক ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ে জন্য বিখ্যাত:

এডিএস-বি ডট এনএল বিশ্বজুড়ে সামরিক উড়োজাহাজ ট্র্যাক করা এডিএস-বি এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিক ডেটা সংগ্রহ করে।

রাডারবক্স-এ খরচ ছাড়াই সার্চের কিছু সুযোগ থাকে। এটি আপনাকে চলমান উড়োজাহাজ ট্র্যাকের সুযোগও করে দিবে। তবে সামরিক অভিযানের নিরাপত্তার কারণে, সেই সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন উড়োজাহাজ পরিচালনাকারীদের গোপনীয়তা রক্ষায়, রাডারবক্স তাদের ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে।

স্ক্র্যাম্বল এ পাবেন ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বিমান বাহিনীর বিভিন্ন উড়োজাহাজের ডেটাবেজ। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশের বিমান বাহিনীর তথ্যও রয়েছে। সাইটটি পরিচালিত হয় ডাচ এভিয়েশন সোসাইটির মাধ্যমে। তাদের একটি কার্যকর ফোরামও রয়েছে। স্ক্র্যাম্বল সোভিয়েত ট্রান্সপোর্ট ডেটাবেজ নামে আরেকটি সাইট চালায়।

প্লেনফ্লাইটট্র্যাকার ন্যাটো এবং রাশিয়ার সামরিক বিমানের জন্য বিশেষজ্ঞ সাইট।

এয়ারক্রাফট সিরিয়াল নম্বর সার্চ মার্কিন সামরিক বিমান খোঁজার সুযোগ দেয়।  এটি পরিচালনা করেন জো বোগার। তিনি নিজেকে “উড়োজাহাজ সিরিয়াল নম্বর আসক্ত” হিসেবে অভিহিত করেন। তার ওয়েবসাইটে উড়োজাহাজ বিষয়ক সাইটগুলোর  অবাক করা সংগ্রহ রয়েছে।

ফটো

বিমানের ছবির বড় সংগ্রহ সম্বলিত দুটি ওয়েবসাইট হলো:

শৌখিন উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষকেরা প্রায়ই ছবি ও ভিডিও ধারণ করে এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

ফ্লাইট-ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলোতে অনেক ছবিও থাকে৷

Planespotters.net gallery

প্লেন স্পটারস ডট নেট ও জেট ফটোস ডট কম-এর মত সাইটগুলোতে ব্যক্তিগত, বাণিজ্যিক ও সামরিক বিমানের ছবির বিশাল ভাণ্ডার আছে। ছবি: স্ক্রিনশট, প্লেন স্পটারস ডট নেট

ট্র্যাকিং পদ্ধতি বুঝতে শিখুন

উড্ডয়নের পর বিভিন্নভাবে উড়োজাহাজ ট্র্যাকিং সম্ভব। আন্তর্জাতিভাবে গ্রহণযোগ্য নতুন ব্যবস্থা এডিএস-বি (অটোমেটিক ডিপেন্ডেন্ট সার্ভেইলেন্স-ব্রডকাস্ট) সবচেয়ে সমৃদ্ধ তথ্য দিয়ে থাকে।

যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসা রাডারভিত্তিক ব্যবস্থার দিকে কিছুটা নজর দেওয়া যাক:

“প্রাইমারি’ রাডার: এটি রেডিও সিগন্যাল বা বেতার সংকেতের প্রতিফলন বিশ্লেষণ করে উড়োজাহাজের একটি সম্ভাব্য অবস্থান বের করে এবং পরিমাপ করে। এটি অনেকটা সিনেমার সেই সবুজ ব্লিপিং স্ক্রিনের মত।

“সেকেন্ডারি সার্ভেইল্যান্স রাডার”: কোনো উড়োজাহাজ বেতার সংকেত গ্রহণের পর সেই তথ্য যখন আবার ফেরত পাঠায়, সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিমানের তথ্য জানা যায় এই পদ্ধতিতে। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের পরিচিতি নম্বর (আইকাও হেক্স কোড) এবং উচ্চতারও তথ্য মেলে। কিন্তু অবস্থান জানা সম্ভব হয় না। তবে একাধিক স্থান থেকে পাঠানো সংকেত পেলে, সেখান থেকে বিমানের গতিপথ বের করা যায়। এভাবে অবস্থান নির্ণয় করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় মাল্টিল্যাটারেশন বা এমএলএটি। (এখানে একটি গ্রাফিকের মাধ্যমে বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে।)

এডিএস-বি পর্যাপ্ত ফ্রিকোয়েন্সি, তথ্য আর বিস্তৃতি, সব দিক থেকে ভালো। খরচও কম। এডিএস-বি পদ্ধতিতে বিমানের ভেতরে বসানো একটি যন্ত্র – স্যাটেলাইট নেভিগেশন ব্যবহার করে, তার অবস্থান নির্ণয় করে। আধা সেকেন্ড অন্তর উড়োজাহাজের উচ্চতা, গতি, দিক, পরিচিতি নম্বরসহ জিপিএস তথ্যটি ট্রান্সমিট করা হয়। একে বলা হয় এডিএস-বি আউট। গতি, উচ্চতা ও অবস্থানের নিরিখে উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণের বিষয়ও অনুমান করা যায়।

এই রেকর্ডগুলো অবশ্য সব সময় সম্পূর্ণ নয়। মরুভূমি, সমুদ্র, মেরু অঞ্চল ও স্বল্প আয়ের কিছু দেশসহ অনেক জায়গায় কোনো রিসিভার নেই। আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চলে এর বিস্তৃতি অসম্পূর্ণ এবং ল্যাটিন আমেরিকায় ত্রুটিপূর্ণ।

এডিএস-বির আপত্তিকর দিকটি হলো, এই সংকেতটি ধারণ করতে যে যন্ত্র লাগে তার জন্য ২০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়। এই আনএনক্রিপ্টেড সংকেত ১০৯০ মেগাহার্টজে ট্রান্সমিট করা হয়, যা ২০০ মাইলের মধ্যে থাকলে ধারণ করা যায়। পৃথিবীতে এখন এমন লাখো রিসিভার আছে, যা এই সংকেত ধারণ করতে পারে। এর বেশির ভাগই রয়েছে শৌখিন উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষকদের কাছে। তাঁরা ধারণ করা সংকেত পাঠিয়ে দেন বাণিজ্যিক অথবা অলাভজনক ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। অনেক সময় এর বিনিময়ে ভাালো অঙ্কের সম্মানীও পান তাঁরা।

এডিএস-সি হলো স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং, আর এটি কেবল কিছু বড় বাণিজ্যিক বিমানে ব্যবহৃত হয়। ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলোর কভারেজ ম্যাপগুলোতে নজর দিতে ডেটার এই উৎস সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি, কারণ এডিএস-সি বিামনের কভারেজকে বাস্তবের চেয়েও ভালভাবে তুলে ধরতে পারে।

কিছু ট্র্যাকিং সেবা এডিএস-বি ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করতে ভর্তুকি দিবে আর ট্র্যাকাররা বিনামূল্যে ডেটা পেতে পারে।

বিমান চলাচল নিয়ে গবেষণায় কোডিংয়ের ব্যবহার

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইটগুলোর মৌলিক টুল ব্যবহার করেই অনেক তথ্যই সংগ্রহ করা সম্ভব।

তবে উপাত্ত পুরোপুরি ব্যবহারের সুযোগ পেতে কিংবা সেগুলোকে কাস্টম প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধন করতে চাইলে আরো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিতে হবে। তবে যেমনটা আগেই বলা হয়েছে, বৃহৎ ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেও চাইলে ডেটা যোগাড় করা সম্ভব। এই সাইটগুলো থেকে তথ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) থাকে। 

ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ের বিস্তর ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণের জন্য আপনাকে ‘আর’ অথবা পাইথন প্রোগ্রামিং জানতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে আপনি কেবল গুগল আর্থে কোনো বিমান চলাচলের পথ যুক্ত করতে পারেন।

পাইথনের মাধ্যমে কীভাবে সহজে ফ্লাইট ট্র্যাকিং করা যায় তা নিয়ে জিওডোসের একটি  টিউটোরিয়াল এবং “আরও আধুনিক উপায়ে পান্ডাস ও বোকেহ ব্যবহার করে কীভাবে এটিকে আরও সুন্দর করবেন,” তার আপডেট পাবেন এখানেআর ওপেনস্কাই নেটওয়ার্ক এপিআই ব্যবহার করে কাছাকাছি বিমান সম্পর্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা সংগ্রহ করতে একটি প্রোগ্রাম লেখার নির্দেশিকা রয়েছে এখানে৷

ফ্লাইট ডেটা ব্যবহারে একজন বিশেষজ্ঞ পিটার আল্ডহাউজতিনি আগে কাজ করতেন বাজফিড নিউজে। একটি উল্লেখযোগ্য অনুসন্ধানে তিনি ফ্লাইটরাডার টুয়েন্টি ফোরের ডেটা ব্যবহার করেছেন।

২০১৬ সালে আল্ডহাউজ “আকাশে গোয়েন্দা নজরদারি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন এফবিআই এবং ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিচালিত উড়োজাহাজগুলো নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবগুলো প্রধান শহরে টহল দেয়।  তিনি পরবর্তীতে গোয়েন্দা নজরদারিতে ব্যবহৃত আরো উড়োজাহাজ সনাক্ত করতে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এফবিআই এবং ডিএইচএস উড়োজাহাজের ডেটা ব্যবহারের উপর তিনি প্রশিক্ষণ নেন। (বিস্তারিত জানতে এই ব্যাখ্যাটি পড়ুন)

বাজফিডের পিটার আল্ডহাউজ ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোরের ডেটা ব্যবহার করে প্রতিবেদন করেছেন যে এফবিআই-এর বিমানগুলো শহর জুড়ে টহল দিচ্ছে৷ ছবি: বাজফিডের সৌজন্যে

অনেক সময় আপনি গিটহাবে তৈরি করা প্রোগ্রাম খুঁজে পেতে পারেন যা আপনার ডেটা বিশ্লেষণে সহায়ক হতে পারে। তারপরও হয়ত আপনার কিছু কোডিং দক্ষতার প্রয়োজন হবে।

এছাড়াও এডিএস-বি এক্সচেঞ্জের ব্যবহার নিয়ে একজন প্লেনস্পটারের ব্যবহারিক পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো।

আমি ‘মাল্টিপল এয়ারফ্রেম’ ফাংশন ব্যবহার করে এডিএস-বিএক্সে হেক্স কোডগুলো জড়ো করি এবং সহজে ব্যবহারের জন্য আমি ফেভারিটস ট্যাবে ইউআরএলগুলো সংরক্ষণ করি। ফলে এই এয়ারফ্রেমগুলোর গতিবিধি সম্পর্কে আমি ২৪ ঘন্টা অবগত থাকি। গ্রুপ করার কোনো সীমা আছে কি না আমি জানি না, তবে আপনি একবারে ৫০০ এর বেশি করলে আপনার কম্পিউটার ক্র্যাশ করবে।

এটি আমার প্রচুর সময় বাঁচায়। যেমন, সারা দিনে এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য পাওয়া হেক্স কোডগুলো জড়ো করে যা প্রমাণ করে যে এটি বাতাসেও কাজ করে। এমন অঞ্চলে (পূর্ব রাশিয়া, আফ্রিকা ইত্যাদি) তেমন রিসিভারের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকে না বলে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন বিমান চলাচল গোপনীয়তা কর্মসূচি পাশ কাটাবেন যেভাবে 

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ সীমায় ব্যক্তিগত বিমানগুলোর বেনামে চলাচলের সুযোগ দিতে মার্কিন সরকারের দুটি কর্মসূচি রয়েছে। ট্র্যাকারদের জন্য এগুলো হতাশাজনক হলেও এই সুরক্ষা অপ্রতিরোধ্য নয়।

লিমিটিং এয়ারক্রাফট ডেটা ডিসপ্লেড (এলএডিডি) কর্মসূচিকে পাশ কাটানো সবচেয়ে সহজ। এলএডিডি এর সুবিধা কাজে লাগিয়ে মার্কিন উড়োজাহাজের মালিকেরা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে তাদের ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে পারে।  এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ এফএএ ডেটা ব্যবহার না করায় এটি এলএডিডি এর সব ফ্লাইট সনাক্ত করে৷ অনানুষ্ঠানিক হলেও এফএএ-এর তথ্যভিত্তিক এলএডিডি লিস্ট দেওয়া রইল। এটি নিয়মিত হালনাগাদ হয়।

আরও সুরক্ষিত ব্যবস্থার জন্য ব্যক্তিগত বিমানের মালিকদের দৌড়ঝাঁপের পর দ্বিতীয় কর্মসূচিটি শুরু হয়েছিল। প্রাইভেসি আইকাও এয়ারক্রাফট অ্যাড্রেস (পিআইএ) কর্মসূচির আওতায় মালিকরা এফএএ এর কাছে তাদের টেল নম্বরের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন অস্থায়ী হেক্স কোডের জন্য আবেদন জানাতে পারে। কোডটি ৬০ দিন স্থায়ী হয় এবং প্রতি ২০ দিন অন্তর বদলানো যায়।

পিআইএ কর্মসূচির মাধ্যমে মার্কিন সরকার ট্র্যাকারদের পথে কিছু বাধা সৃষ্টি করলেও তারা বেশ কিছু সমাধানও বাতলে দিয়েছে। অনেক মালিকই এই কর্মসূচির সুবিধা না নিলেও তাদের বেনামী থাকার ইচ্ছা মনোযোগ কেড়েছে। এজন্য পিআইএ বাস্টার্স নামে একটি ফেসবুক সাইট আছে।

কোনো বিমান পিআইএ কোড ব্যবহার করছে কিনা কীভাবে বুঝবেন? এডিএস-বি এক্সচেঞ্জে “পিআইএ” এর জন্য একটি ফিল্টার আছে। এটিতে ক্লিক করুন আর পিআইএ ফ্লাইট দেখুন, সাধারণত এমন ফ্লাইটের সংখ্যা হাতে গোনা।

বিশেষজ্ঞরা পিআইএ কোড জেনে বিমানটি শনাক্ত করার কয়েকটি উপায় জানান। সেগুলোর বেশিরভাগই যতটা না কারিগরী, তার চেয়ে অনেক আচরণগত।

  • পিআইএ বিমান চলাচলের প্রবণতা দেখুন এবংপরিচিত রুট ও গন্তব্যে নজর রাখুন। (এগুলো একটি স্প্রেডাশিটে টুকে রাখুন।)
  • সম্ভাব্য ব্যক্তির সঙ্গে বিমানের গতিবিধির যোগসূত্র খুঁজে পেতে সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদের বিবরণ থেকে সূত্র ব্যবহার করুন।
  • বিমানের পরিচয় নিশ্চিত হতে পিআইএ বিমানের গতিবিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাঠপর্যায়ে (এবং বিমানবন্দরে লাইভ ওয়েব ক্যামে) যা দেখা যায়, তাতেই ভরসা রাখুন। বিমানের পাশে আঁকা নম্বর বদলায় না।
  • এসিএআরএস এর বার্তাগুলো যাচাই করুন। এখানে শনাক্তকরণ তথ্য পেতে পারেন। (নিচে এসিএআরএস সম্পর্কে আরও।)
  • পিআইএ নম্বর দিয়ে অন্যান্য সার্চ সাইটে দেখুন, কারণ মাঝে মাঝে অনেক ত্রুটিও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করে৷

তবে আরও আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের সম্ভাবনা আছে। যেমন, সৌদি আরব ২০২২ সালের শেষ দিকে “গোপনীয়তা রক্ষার একটি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ের সুপারিশ করে” আইকাও-তে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল। ২০২৩ সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ফ্লাইটের ডেটা পেতে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার

যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট সংশ্লিষ্ট ডেটা পাওয়ার আরেকটি উপায় হলো ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা। এই ইমেইল ঠিকানায় আবেদন পাঠানো যেতে পারে: 7-awa-arc-foia@faa.gov

“টেইল নম্বর সহ বিমানের জন্য টিএফএমএস রিপোজিটরি ফ্লাইট রেকর্ড” জানতে চান এবং টেইল নম্বরটি দিন। টিএফএমএস হলো ট্রাফিক ফ্লো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রিপোজিটরি। এছাড়াও একটি সময়সীমা ঠিক করুন যেমন “…১লা জানুয়ারী ২০২৩ থেকে এই আবেদন নিষ্পত্তির তারিখ পর্যন্ত সময়ে।” এটি ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে দিতে বলুন। প্রদত্ত ডেটার মধ্যে ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য থাকে; মালিক তার ব্লকিং অপশন ব্যবহার করলে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ব্যবস্থায় এই ডেটা পাওয়া যায় না।

উদাহরণ হিসেবে প্রোপাবলিকা রিপোর্টার জাস্টিন এলিয়টের ২০২০ সালের একটি স্টোরির কথা বলা যায় – স্টিভ ব্যাননের ব্যক্তিগত জেট ব্যবহারে চীনা ব্যবসায়ীর যোগসূত্র, প্রচারণায় অর্থায়ন আইন লঙ্ঘন করতে পারে

ট্র্যাকিং রেডিও বার্তা – এসিএআরএস

বিমান ট্র্যাক করার আরেকটি উপায় হলো বিমান ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এর মধ্যকার ক্ষুদে বার্তা অনুসরণ করা। রেডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেম এসিএআরসি (দ্য এয়ারক্রাফট কমিউনিকেশনস অ্যাড্রেসিং অ্যান্ড রিপোর্টিং সিস্টেম) নামে পরিচিত। (এ ব্যাপারে বিশদ বিবরণসহ একটি ভিডিও দেখুন বা তুলনামূলক কম কারিগরি বিষয়ক ভিডিও দেখুন।)

আনএনক্রিপ্টেড ট্রান্সমিশনগুলো মূলত ফ্লাইট পরিকল্পনা তুলে ধরে, তবে তা যান্ত্রিক সমস্যা সম্পর্কিতও হতে পারে। ২০২১ সালে কাবুল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পর্যবেক্ষণকারীররা ব্যাপকভাবে এসিএআরসি বার্তায় নজর রেখেছিলেন।

অনেক শর্ট-হ্যান্ড জার্গন ব্যবহারের কারণে বার্তাগুলোকে ব্যাখ্যা করা কঠিন৷ এই ব্লগ পোস্টে “এটিবি: এয়ার টার্ন ব্যাক” এর মতো কেবল সংক্ষিপ্ত রূপ তুলে ধরা হয়েছে। ক্যাপ্টেন যখন গন্তব্যের দিকে না গিয়ে ডিপারচার বিমানবন্দরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে এটিবি বলে। আর আরেকটি নিবন্ধে কয়েকটি উদাহরণ আছে। এসিএআরএস এর বিস্তৃত পরিসরের কথোপকথন অর্থোদ্ধার করতে আপনার সম্ভবত একজন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে।

গ্রাউন্ড বা স্যাটেলাইট রিসিভার দিয়ে বার্তাগুলো ধরা যায় এবং এয়ার ফ্রেইমস ডট আইও একটি আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালা তৈরি করেছে। এই সাইটটি @thebaldgeek@AirframesIO হিসেবে টুইট করে। এসিএআরসি এর বার্তা প্রায় রিয়েল টাইমেই পোস্ট করা হয়। সেগুলো “বার্তা” পৃষ্ঠায় জিপ করে, তবে সার্চ করা যায়।

লাইভ এটিসি ডট নেট নামে আরেকটি সাইট বিশ্বব্যাপী লাইভ এটিসি রেডিও ট্রাফিক থেকে লাইভ এয়ার ট্রাফিক কমিউনিকেশন্সের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলে। লাইভ এটিসি ডট নেট সংগ্রশালা ফিরে পাওয়া সহ লাইভ ও ধারণকৃত উভয় ধরনের এটিসি অডিও ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে।

এভিয়েশন নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যের সহজলভ্যতা

দুর্ঘটনার প্রতিবেদন থেকেও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশে উড়োজাহাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো দুর্ঘটনা ও তদন্তের নথি প্রকাশ করে।

এভিয়েশন সেইফটি নেটওয়ার্ক (এএসএন) একটি বেসরকারি ও স্বাধীন উদ্যোগ। তারা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ, সামরিক বিমান এবং কর্পোরেট জেটের দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর একটি অনলাইন তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে। দুর্ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব পালন করা সংস্থাগুলোর একটি আন্তর্জাতিক তালিকাও আছে এএসএন-এ।

এভিয়েশন হেরাল্ড বিশ্বব্যাপী সব ধরনের ঘটনা ও দুর্ঘটনার প্রতিবেদন করে।

যুক্তরাষ্ট্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সংস্থা হিসেবে কাজ করে ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড সেইফটি বোর্ড

ক্রয় ও চুক্তির রেকর্ডে মত অন্যান্য মার্কিন এজেন্সি রেকর্ড সরকারী বিমানের তথ্যের সম্ভাব্য সোর্স সরবরাহ করতে পারে। বিমানে কোনো পরিবর্তন আনা হলে তা এফএএ নিবন্ধন নথিতে পাওয়া যায়, এমনকি  নাইট-ভিশন ক্যামেরা সংযোজন পর্যন্ত।

মার্কিন গোপনীয়তা কৌশল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অথবা ট্রাস্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করে কিছু মালিক তাদের উড়োজাহাজের পরিচিতি আড়াল করেন। দেশটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদকরা এমন কিছু ঘটনা উন্মোচন করেছেন।

মার্কিন সরকার বিদেশী উড়োজাহাজের মালিকানা, সেখানে নিবন্ধিত কোনো ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তরের সুযোগ দেয়। দেশটিতে ১,০০০ এর বেশি বিমান ট্রাস্টের ঠিকানায় নিবন্ধিত। তারই একটি এয়ারক্রাফট গ্যারান্টি র্কপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির সবকিছুই টেক্সাসের ওনালাস্কায়। অথচ এটি এমন এক শহর যেখানে কোন বিমানবন্দরই নেই। ডব্লিউএফএএ এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বোস্টন গ্লোব, বেনামী নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে আকাশে গোপনীয়তা শিরোনামে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, “ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিথিল নজরদারি যুগের পর যুগ ধরে মাদক কারবারি, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এবং এমনকি সন্ত্রাসের সাথে জড়িতদের ব্যক্তিগত বিমান নিবন্ধন এবং পরিচয় লুকানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। যা বেরিয়ে এসেছে স্পটলাইটের (বোস্টন গ্লোবসের অনুসন্ধানী ইউনিট) একটি দলের অনুসন্ধানে।” গ্লোবের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত প্রতি ছয়টি উড়োজাহাজের একটির পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব নয়।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে কীভাবে রাশিয়ার একজন সম্পদশালী নিবন্ধনের এই ফাঁকফোকরের সুবিধা নিয়েছেন। (এই ধরনের চর্চার পক্ষ নিয়ে, বিজনেস জেট ট্রাভেলারের পর্যবেক্ষণধর্মী প্রতিবেদনটি পড়ুন।)

ইজারার জটিলতা

যখন উড়োজাহাজ লিজ বা ইজারা দেয়া হয়, তখন কে তার টাকা পরিশোধ করছে সেটি বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।

এমনই এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন হাঙ্গেরিয়ান অনুসন্ধানী সাইট আটলাটসোর রিপোর্টার এর্দেলি কাতালিন। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বানের ব্যক্তিগত জেট ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার অনুসন্ধানে পাওয়া যায় উড়োজাহাজটি অস্ট্রিয়ায় নিবন্ধিত। কিন্তু কে এর জন্য অর্থ ব্যয় করেছে সেটি জানা যায়নি। জেটটি পরিচালনা করত বিজনেস জেট পরিচালনার জন্য খ্যাত অস্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল জেট ম্যানেজমেন্ট।

এই অনুসন্ধানের বর্ণনা দিয়ে আটলাটসোর রিপোর্টারদের একটি লেখা প্রকাশ করেছে জিআইজেএন। যার শিরোনাম, “একটি ব্যক্তিগত ইয়ট, একটি বিলাসবহুল জেট এবং হাঙ্গেরির শাসক এলিট।”

ভিক্টর ওর্বান ২০১৮ সালের ২৫শে জুলাই বুদাপেস্ট বিমানবন্দরে জেট ওই-এলইএম থেকে  বের হচ্ছেন। ছবি: আটলাসজো/ড্যানিয়েল নেমেথ 

নিবন্ধনের জনপ্রিয় দেশ

উড়োজাহাজের মালিক যেখানে বসবাস করেন সেখানেই নিবন্ধন করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। উড়োজাহাজ পুনঃনিবন্ধনও করা যায় (অনেক সময় বদলে ফেলা যায় আইডি নম্বরও)

কর্পোরেট জেট ইনভেস্টর এর অফিসিয়াল গাইড টু এয়ারপ্লেন রেজিস্ট্রেশন ২০১৯ এ উড়োজাহাজ নিবন্ধনের জাতীয় বিধিবিধানগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে উড়োজাহাজ শিল্পের ব্যবসা সংক্রান্ত খবরাখবরও থাকে। শিথিল নিবন্ধন, গোপনীয়তা ও কর সুবিধা তাদের আগ্রহের বিষয়।

উড়োজাহাজ নিবন্ধনের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গন্তব্য আইল অব ম্যান। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বশাসিত এই দ্বীপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে করফাঁকির সুযোগ করে দেয়।

এমন সুবিধা পাওয়া যায় আরুবা, বারমুডা এবং কেম্যান আইল্যান্ডসের মত জায়গায়ও।